ফেরা: বাগডোগরা বিমানবন্দরে রোশন। নিজস্ব চিত্র
এর আগে একবার চাউর হয়ে গিয়েছিল, বিমল গুরুং ও রোশন গিরি বোগডোগরায় ফিরছেন। সে দিন বিমানবন্দর ঘিরে মোতায়েন ছিল পুলিশ। শেষে আর আসেননি দু’জনের কেউ। এ দিন সাড়ে তিন বছর পরে বাগডোগরায় ফিরে কিন্তু উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন রোশন গিরি। তাঁকে স্বাগত জানাতে শতাধিক সমর্থক হাজির ছিলেন। উত্তরবঙ্গে ফিরেই বিমল গুরুংয়ের পাহাড়ে আসার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন মোর্চা নেতা রোশন। তবে একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিলেন, তা হবে ধাপে ধাপে। বিমলপন্থী মোর্চা সূত্রে খবর, আজ, রবিবার কার্শিয়াংয়ের সভায় থাকতে পারেন রোশন।
সব ঠিক থাকলে ৬ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে সভা করার কথা বিমলের। তার আগে পুরনো বিমলপন্থীদের মনোবল বাড়িয়ে পাহাড়ে সংগঠন শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই যে রোশন এসেছেন, তা-ও এ দিন ইঙ্গিতে জানিয়ে দেন রোশন। কিন্তু এ দিনই বিনয়পন্থী মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অনীত থাপা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পাহাড়ে নতুন করে অশান্তি হলে তাঁরাও ছেড়ে কথা বলবেন না। এ দিন রোশনের কথাতেও সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। রবিবার কার্শিয়াংয়ে বিমলপন্থীদের সভা। থাকার কথা রোশন গিরির। সেখান থেকেই বিনয়, অনীতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হবে বলেই দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত।
এদিন রোশনকে স্বাগত জানাতে এসে বিমলের ছবি লাগানো পতাকা আর ‘জয় গোর্খাল্যান্ড’ স্লোগান তুলেছেন অনুগামীরা। যদিও বিমানবন্দরে এ দিন রোশন জানান, ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে এই নিয়ে ভাববেন তাঁরা। তার আগে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই। তিনি বলেন, ‘‘বিমল পাহাড়ে ফিরলেই সেখানে গণতন্ত্র ফিরবে। কারণ বিনয়রা স্বঘোষিত নেতা।’’ তাঁর দাবি, পাহাড়ে তিন বছরে জিটিএ নানারকম দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণে জড়িয়েছে। সেগুলির সমাধানেই বিমলের পাহাড়ে আসা জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা।
এ দিন দলীয় সমর্থকরা দাবি করেন, বিমল-রোশনদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের পাহাড়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন। পাহাড়ে মোর্চা নেতাদের একটি অংশের কর্মীদের খোঁজ পুলিশ আপাতত বন্ধ রেখেছে বলেই জানান তাঁরা।
তবে বিমলের পাহাড়ে আসার পথ কতটা সুগম হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্য গোষ্ঠীর নেতারা আশঙ্কা করছেন, বিমল পাহাড়ে ফিরে বিনয়, অনীতদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে নামবেন। ফলে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিছু দিন আগেই মোর্চার একটি সভায় বিনয়পন্থী এক মোর্চা কর্মীকে ছুরি মারার অভিযোগ উঠেছিল বিমলপন্থীদের বিরুদ্ধে। দু’জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এ দিনই কালিম্পংয়ে অনীত বলেছেন, ‘‘বিমল, রোশনদের কেউ পাহাড় থেকে যেতে বলেননি। কিন্তু তাঁরা নিজেরাই পালিয়ে গিয়েছেন। আমরা পাহাড়কে গত তিন বছর ধরে শান্ত রেখেছি। তা বিঘ্নিত হতে দেব না। বিমলের সমর্থকরা প্রতিশোধের মানসিকতা নিয়ে চলছে। তা হলে তো সংঘাত লাগবেই।’’