উদ্যোগ: মাছের চারা ছাড়া হচ্ছে বীরপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
সর্ষে পুঁটি থেকে দারিকার ঝাল, কড়কড়ে ভাজা বেলে মাছ কিংবা মৌরলা, বাতাসির চচ্চড়ি! এ বার মৎস্যপ্রেমীদের পাতে ওই চুনোপুঁটিদেরও নানা পদের মেনু পাতে ফেরাতে চাইছে মৎস্য দফতর।
এ জন্য মাছ চাষিদের উৎসাহ বাড়াতে কোচবিহারেও চুনোপুঁটি উৎসবের আয়োজনের তোড়জোড় চলছে। মৎস্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলার খাল, বিল, পুকুর, দিঘি-সহ সমস্ত জলাশয়ে ওই সব ছোটমাছের উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ছোট মাছের রকমারি প্রজাতি সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়ান উৎসবের অন্যতম লক্ষ্য। ডিসেম্বরের শেষে জেলায় এ বার প্রথম বর্ষের চুনোপুঁটি উৎসবের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মৎস্য দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক অলোকনাথ প্রহরাজ বলেন, “ছোট মাছের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। সেসব মাথায় রেখেই ওই সব মাছ চাষে উৎসাহ দিতে চাইছি। উৎসবের প্রস্তুতি এগোচ্ছে।” দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে,
কোচবিহার জেলায় বছরে গড়ে ২৬,৬৫০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। তারমধ্যে সিংহভাগ বড় মাছ, চুনোপুঁটির সঙ্গে তুলনায় মাছের দুনিয়ার রাঘব বোয়াল রুই, কাতলা, মৃগেলের গতানুগতিকতার ওই চাষের বাইরে আসতে অনীহার জেরেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। চুনোপুঁটির চাহিদা যথেষ্টই। চাষিদের ঠিকঠাক বোঝান হলে ওই সব মাছের উৎপাদন অনেকটা বেড়ে যাবে।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কোচবিহারের বাজারগুলিতে বছর দশেক আগেও পুঁটি, কাকিলা, বাইম, বাতাসি, মৌরালা, নেদস, কুচো চিংড়ি, চাঁদা, চাপিলা, বেলে, দারকা, ট্যাংরা, তিনকাটার মত হরেক প্রজাতির দেদার মাছ মিলত। তাঁদের অভিযোগ, বড় মাছ চাষের ঝোঁক বেড়ে যাওয়ায় এখন জাল ফেললেও চুনোপুঁটি মাছের তেমন দেখা মেলেনা। মৎস্য দফতরের এক কর্মীর কথায়, চাষের সম্ভাবনা, প্রয়োজনীয়তা থেকে বাণিজ্যিক সাফল্যের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু প্রচার নেই।
উৎসবে ওই খামতি মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। আশা করছি এতে অবস্থা অনেকটা বদলান যাবে। বড় মাছের ভিড়ে বাড়িতে বৈচিত্র্যের সুযোগ বাড়বে।
উৎসবের আয়োজনে খুশি হোটেল ব্যবসায়ী থেকে ক্যাটারার মালিকদের অনেকেই। তাঁদের কয়েকজন জানিয়েছেন, অনুষ্ঠান বাড়িতে শীতের রাতে বেগুন, মুলো দিয়ে মেনুতে অনেকেই ছোট মাছের চচ্চড়ি রাখতে চান। কম জোগান, বেশি দাম ছাড়া কোনও মাছ রাখা হবে তাতে তেমন ‘অপশন’ থাকে না, ওই খামতি মেটা দরকার। দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই সব প্রজাতির ডিম, পোনা উৎপাদনে তাই জোর দেওয়া হচ্ছে।