মঙ্গলবার এই বোয়ালই ধরা পড়ে করলায়। ফাইল চিত্র।
ফের করলার জলে ফেলা ছিপে ধরা পড়ল পেল্লাই বোয়াল মাছ। মঙ্গলবারই শহরের বাসিন্দা পলাশ রায় ছিপ ফেলে ১৭ কেজি ওজনের বোয়াল ধরে চমকে দেন। ঘোর না-কাটতে বুধবার অন্য এক শিকারির ছিপে ১৯ কেজি ওজনের রাঘব বোয়াল ধরা দিল। পরপর বড় মাছ শিকারের খুশি শহরবাসী মনে করছেন স্বমহিমায় ফিরছে জলপাইগুড়ি শহরের ‘টেমস’ করলা নদী। তাঁদের একাংশ টিকিট কেটে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করে রোজগারের সুযোগ তৈরির দাবি তুলেছেন। যদিও মৎস্য দফতর এবং পুরসভার কর্তারা ওই বিষয়ে কোন আশ্বাস দিতে পারেনি।
বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল থেকে উৎপন্ন হয়ে জলপাইগুড়ি শহর চিরে চলে যাওয়া করলায় রাঘব বোয়ালের দেখা মেলাতে অবশ্য বিস্ময়ের কিছু মনে করছেন না মৎস্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানান, এক দশক আগে ২০ কেজি থেকে ২৪ কেজি ওজনের বোয়াল ধরা দিয়েছে করলার জলে। ২০১১ সালে কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় ওই নদীতে ভেসে উঠেছিল ২২ কেজি ওজনের বোয়াল। মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নদী ও জলাশয়ে ‘সিলুরিডে গোত্রের’ ওই ক্যাট ফিসের দেখা মেলে। জলপাইগুড়ির করলায় বোয়াল ছাড়াও যে ট্যাংরা, ফলুই, পুঁটির মতো অন্তত ৪৩টি প্রজাতির মাছ রয়েছে সেটা জল দূষণের কারণে ভেসে ওঠা মাছ থেকে প্রমাণ মিলেছে। এর পরে দীর্ঘদিন বড় মাছের দেখা মেলেনি। মঙ্গলবার ও বুধবার পরপর দুটি ‘রাঘব বোয়াল’ ধরা দিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন দূষণে বিধ্বস্ত করলার পরিবেশ কয়েক বছরে ফিরেছে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তথা মৎস্য বিশেষজ্ঞ সুদীপ বরাট বলেন, “এটা ভাল লক্ষণ । করলা স্বমহিমায় ফিরছে। এক সময় ওই নদীতে প্রচুর বোয়াল পাওয়া যেত। বিষক্রিয়ার ঘটনার পরে চিন্তা ছিল। অনেকদিন পরে বড় বোয়াল দেখে মনে হচ্ছে নদীর বাস্তুতন্ত্র ফিরেছে।”
বুধবার দুপুর নাগাদ শহরের দোলনা সেতুর পাশে রাহুল শা নামে এক মৎস্য শিকারির ছিপে ১৯ কেজি ওজনের ওই বোয়ালটি ধরা পড়ে। প্রায় চার ঘণ্টার কসরতের পরে তিনি ওই মাছ ডাঙায় তোলেন। কানকোতে দড়ি লাগিয়ে গরুর মতো পাড়ে খুঁট পুঁতে মাছটি বেঁধে রাখেন। ফের পেল্লাই বোয়াল শিকারের খবর ছড়িয়ে পরলে নদী পাড়ে ভিড় উপচে পড়ে। অনেকে ছবি তুলতে শুরু করেন। রাহুল বলেন, “ভাবতে পারিনি বোয়াল উঠবে। কিন্তু বড় মাছ সেটা টের পেয়েছি সুতোর টান দেখে। হুইল ধরে রাখতে পারছিলাম না।” রাহুল এদিন যেখানে মাছ ধরেছে তাঁর কাছেই মঙ্গলবার ধরা পড়ে ১৭ কেজি ওজনের বোয়াল।
এ দিন ভিড় ঠেলে গিয়ে বিরাট মাছকে লেজ নাড়তে দেখে অবাক হয়েছেন সমাজপাড়ার বাসিন্দা বিবেক সরকার, অলোক বিশ্বাসের মতো অনেকেই। তাঁরা বলতে শুরু করেন মৎস্য দফতর অথবা পুরসভা টিকিট দিয়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করলে একদিকে রোজগারের ব্যবস্থা হবে, অন্যদিকে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে।
যদিও জেলা মৎস্য আধিকারিক পার্থ দাস বলেন, “নদীতে সেটা সম্ভব নয়।” পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “প্রচুর মৎস্যজীবী এখানে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই নদীতে টিকিট কেটে মাছ ধরার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না।”