মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সাট্টারি এলাকায় দু’বার গুলি চালানোর ঘটনায় উদ্বিগ্ন মালদহের মানুষ। বিরোধীদের দাবি, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় গোটা মালদহই আস্তে আস্তে দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। কংগ্রেসের সাংসদ মৌসম বেনজির নুর বলেন, ‘‘কালিয়াচকে প্রায়ই গুলি চলার কথা শোনা যায়। অনেকে আহতও হয়েছেন। এখন শহরের গা ঘেঁষা এলাকাতেও গুলি চলছে। পুলিশ-প্রশাসন নিষ্ক্রিয় বলেই পরিস্থিতি।’’
রবিবার রাতে ইংরেজবাজার থানার সাট্টারির ভিকনপুর এলাকায় এক যুবককে গুলি করে তাঁর মোটরবাইক সহ সর্বস্ব দুষ্কৃতীরা লুঠ করে বলে অভিযোগ। আহত যুবক আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। আক্রান্তের নাম সঞ্জয় বসাক। ইংরেজবাজারের নিয়ামতপুরের কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা সঞ্জয়বাবু পেশায় রাজমিস্ত্রি।
গত শনিবার রাতে ইংরেজবাজারের সাট্টারি ব্রিজে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হয়েছিলেন মলয় সরকার। মলয়বাবুকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর ভাগ্নে মিঠু সরকারও। তিনটি মোটরবাইকে করে সাত দুষ্কৃতী গিয়ে আচমকা তাঁকে মারধর করে গুলি চালায়। বোমাও ফাঠানো হয়। এখনও তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরই মাঝে ফের একই থানা এলাকার ওইদিনের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে ভিকনপুরে ফের চলল গুলি। এই ঘটনায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগ, মোথাবাড়ি-অমৃতি রাজ্য সড়কে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের গুলিতে একের পর এক সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তবুও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারে ব্যর্থ পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, এদিনের ঘটনায় আক্রান্তের নাম সঞ্জয় বসাক। তিনি ইংরেজবাজারের বিনোদপুরের নিয়ামতপুরের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। সঞ্জয় বাবু পেশায় রাজমিস্ত্রি। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
সঞ্জয়বাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ সাট্টারির কামাত থেকে বন্ধুর বিয়ে বাড়ি থেকে মোটরবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তাঁরা তিন ভাই। সকলেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এদিন সারা রাত ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। যার ফলে মোটরবাইক ধীর গতিতে চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সঞ্জয়বাবু। মোথাবাড়ি-অমৃতি রাজ্য সড়ক দিয়েই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। আচমকা দেখেন ভিকনপুরের কাছে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন চার যুবক। প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল। ফলে বাইক জোরে চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাননি সঞ্জয়বাবু। তারপর দুষ্কৃতীরা তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্রের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি বাইক থেকে পড়ে যান। সঞ্জয়বাবুর কাছে থাকা একটি দামি মোবাইল ফোন এবং মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। তারপরে মোটরবাইকটি ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তিনি বাধা দিতে গেলে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। বাঁ কাঁধ ছুঁয়ে গুলি বেড়িয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি লুটিয়ে পড়লে চার দুষ্কৃতী ওই মোটরবাইকে করেই অমৃতির দিকে পালিয়ে যায়।
একই এলাকায় পরপর দুই দিন দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় পুলিশি টহলদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইংরেজবাজারের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশি টহলদারির অভাবে ওই সব এলাকা দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়ে উঠেছে। আমি অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছি’’ পুলিশ সুপার প্রসূনবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সারা রাত টহলদারি চলে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হবে।’’