বক্সিরহাটে আগুন নেভাতে ফের তলব অসম দমকলকে

এক মাসের ব্যবধানে ফের বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হল কোচবিহারের বক্সিরহাট বাজারের ২১টি দোকান। এ বারও প্রতিবেশী রাজ্য অসম থেকে দমকলের ইঞ্জিন এনে পরিস্থিতি সামলানো হয়। সোমবার রাতে দমকলের ন’টি ইঞ্জিন প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বক্সিরহাট শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

বক্সিরহাট বাজারে জ্বলছে দোকান। —নিজস্ব চিত্র।

এক মাসের ব্যবধানে ফের বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হল কোচবিহারের বক্সিরহাট বাজারের ২১টি দোকান। এ বারও প্রতিবেশী রাজ্য অসম থেকে দমকলের ইঞ্জিন এনে পরিস্থিতি সামলানো হয়।

Advertisement

সোমবার রাতে দমকলের ন’টি ইঞ্জিন প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মধ্যে পাঁচটি ইঞ্জিনই অসমের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হয়। বাকি চারটি ইঞ্জিনের দুটি তুফানগঞ্জ থেকে ও একটি করে ইঞ্জিন আসে কোচবিহার ও বারবিশা এলাকা থেকে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক অনুমান। মঙ্গলবার বক্সিরহাট বাজার চত্বরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে একটি নাগরিক কনভেনশনে অসম নির্ভরতা কাটাতে এলাকায় দমকল কেন্দ্র তৈরির দাবি তোলেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা।

তুফানগঞ্জের মহকুমা শাসক পালদেন শেরপা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্থদের সবরকম সাহায্য করা হবে। এলাকায় দমকল কেন্দ্র তৈরির ব্যাপারে ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠান হয়েছে। জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে।” তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপন সাহা বলেন, “বক্সিরহাট বাজার এলাকা অসমের সীমানা লাগোয়া। তাই এবারেও অসমের দমকল কেন্দ্রগুলিতে যোগাযোগ করা হয়। এখান থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসার ফলে আগুন নেভানোর কাজ সহজ হয়েছে। বক্সিরহাটে স্থায়ী দমকল কেন্দ্র তৈরির প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।”

Advertisement

পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ১০ টা নাগাদ বক্সিরহাট বাজারের একটি জামাকাপড় তৈরির দোকানে প্রথম ধোঁয়া দেখা যায়। এলাকার বাসিন্দারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া মোবাইল, ওষুধ, অলঙ্কার, স্টেশনারি সামগ্রী, বাসনপত্র, ও জুতোর দোকানেও। আধ ঘন্টার মধ্যে তুফানগঞ্জ দমকল কেন্দ্রের দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বারবিশা ও কোচবিহার থেকেও একটি করে দমকলের ইঞ্জিন বক্সিরহাটে পৌঁছায়।

কিন্তু পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে টের পেয়ে অসমের গোলকগঞ্জ ও ধুবুরি থেকে দু’টি করে ও বিলাসীপাড়া থেকে একটি দমকলের ইঞ্জিন আনা হয়। রাত প্রায় ১টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন অটল রায় বলেন, “রাত সওয়া ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাই। পরে ফোন পেয়ে ছুটে এসে দেখি আমার দোকান জ্বলছে। ১৩ টি সেলাই মেশিন, প্রচুর অর্ডারের জামাকাপড় ছাই হয়ে গিয়েছে। কি করে এমন ঘটনা হল বুঝতে পারছিনা।” প্রাথমিকভাবে দমকল কর্তাদের অনুমান, শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে শুনেছি। ওই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দমকল কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। আগুন লাগার কারণ নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

গত ফেব্রুয়ারি মাসেও বক্সিরহাট বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শতাধিক দোকান ভষ্মীভূত হয়। সেবারেও অসম থেকে দমকলের সাতটি ইঞ্জিন বক্সিরহাট বাজারে আগুন নেভানোর কাজ করে। ওই ঘটনায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। পুড়ে যাওয়া বাজারে প্রশাসন সুপার মার্কেট গড়তে উদ্যোগী হয়েছে। তবে ওই কাজ এখনও শুরু হয়নি। বিকল্প জায়গায় ক্ষতিগ্রস্থরাও নতুন দোকান তৈরি করে উঠতে পারেননি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে কিছু অস্থায়ী দোকান তৈরির কাজ চলছে।

ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সোমবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে আতঙ্ক বেড়েছে। কিভাবে আগুন লাগল তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পুলিশি তদন্তের দাবিও তুলেছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। বক্সিরহাট ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা বিপুল রায় বলেন, “একমাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার বাজারে এমন অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক বেড়েছে। এবারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement