‘সাহায্য’: (বাঁ দিকে) গত বছরের টুকলি সরবরাহের চিত্র। ফাইল চিত্র (ডান দিকে) মেয়েকে টুকলি দিতে গিয়ে ধৃত। মালদহে। নিজস্ব চিত্র
নিজে কখনও স্কুলের বেড়া টপকাননি। পরিবার থেকে প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে মেয়ে। পুলিশ, র্যাফের টহলদারি সত্ত্বেও জানলা দিয়ে মেয়েকে কাগজের টুকরো দিতে দৌড় লাগালেন চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে পৌঁছতেই পিছন থেকে ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেললেন সাদা পোশাকের এক পুলিশ। বুধবার মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষায় এমনই দৃশ্য দেখা গেল মালদহের মানিকচক থানার কালিন্দ্রী হাই স্কুল-সহ কয়েকটি কেন্দ্রে। নকল থেকে শুরু করে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ। গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় একাধিক কারণে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল মালদহের নাম। এ বার তা কার্যত রুখে দিল পুলিশ, প্রশাসন এবং পর্ষদ।
জেলার কোন কেন্দ্রে নকলের অভিযোগ রয়েছে কি না খতিয়ে দেখছেন পর্ষদকর্তারা। পরীক্ষার্থীদের একাংশ পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়।
কালিন্দ্রী স্কুলে নকল সরবরাহ করতে গিয়ে ধরা পরে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে থাকে অভিযুক্ত। তার অনুরোধ, “স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। কষ্ট করে মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি। যাতে ফেল না করে তাই অন্যের কথা শুনে নকল দিতে যাচ্ছিলাম। এমন ভুল কখনও করব না।” মালদহের অতিরিক্ত পুলিশসুপার দীপক সরকার বলেন, নকল সরবরাহের চেষ্টা করতে গিয়ে ইংরেজবাজার, মানিকচক সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। ফলে নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে পরীক্ষা।
এ দিন অন্তত ৪০টি মোবাইল ফোন আটক করেছে পরীক্ষকেরা। মালদহ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তাপসকুমার বিশ্বাস বলেন, “বেশ কিছু স্কুলে পরীক্ষার্থীরা মোবাইল নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। পরীক্ষা শুরুর আগেই মোবাইলগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়। মোবাইলগুলো খতিয়ে দেখা হবে।”
গত বছরও মালদহের অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার খাতা মিলতে না মিলতেই বাইরে থেকে শুরু হয়ে যেত নাম ধরে হাঁক ডাক। লেখা ছেড়ে জানলা দিয়ে উঁকি দিত পরীক্ষার্থীরা। বাইরে থেকে উড়ে আসত ছোট মাটির টুকরোয় বাঁধা নকল। ইংরেজবাজারের শান্তাদেবীয়া হাই স্কুল, সাট্টারি হাই স্কুল, ভর্তিটারি, নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়, রায় গ্রাম হাইস্কুল এবং মানিকচকের কালিন্দ্রী হাইস্কুল, মথুরাপুর হাই স্কুলে পরীক্ষার শুরুর দিন থেকে নকল সরবরাহের ছবি দেখা যেত। তাই ওই কেন্দ্রগুলো নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন পর্ষদও। এবার নকল সরবরাহ রুখতে তৎপর শিক্ষা দফরের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, প্রশাসনের কর্তারাও। তাই পুলিশ, র্যাফ, সিভিক ভলেন্টিয়ার সহ প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রেই মোতায়ন করা হয় সাদা পোশাকের পুলিশ।