একেই পর্যাপ্ত হিমঘরের অভাবে দুই দিনাজপুর ও মালদহের বহু কৃষক এখনও পর্যন্ত হিমঘরে আলু রাখতে পারেননি বলে অভিযোগ। তার উপরে উত্তরবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাসের জেরে আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়, তিন জেলায় জমি থেকে আলু তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষকেরা বাড়তি আলু কোথায় রাখবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ফলে, তৈরি হয়েছে চাষিদের অভাবি আলু বিক্রির আশঙ্কাও। শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত দফায় দফায় মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে হাল্কা বৃষ্টি হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেক কৃষক।
কৃষি দফতরের পুরাতন মালদহের সহ-অধিকর্তা সাইফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘‘ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আলুর কোনও সমস্যা হবে না। তাই, দু’দিনের এই বৃষ্টিতে আলুর ক্ষতির তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে ভারী বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে গেলে সমস্যা হবে।’’ তিনি জানান, আলু তোলার কাজ শুরু হয়েছে। মার্চ মাস পর্যন্ত তা চলবে।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ বছর উত্তর দিনাজপুর জেলায় অনেক এলাকায় আলু তোলা হয়নি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে গত দু’দিনে সে কাজে গতি এসেছে। জেলায় সাতটি হিমঘর মিলিয়ে প্রায় ১.১০ লক্ষ টন আলু রাখার পরিকাঠামো রয়েছে। জেলায় আলু হয়েছে প্রায় আট লক্ষ টন। এই পরিস্থিতিতে জমি থেকে তোলা বাকি আলু কোথায় রাখবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা। হেমতাবাদের বাঙালবাড়ির আলু চাষি মজিবুর রহমানের মন্তব্য, “চাষিদের লোকসান এড়াতে অবিলম্বে রাজ্য সরকারের কুইন্টাল প্রতি এক হাজার টাকা সহায়ক দরে চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনার কাজ শুরু করা উচিত।”
দক্ষিণ দিনাজপুরে এখনও পর্যন্ত জমি থেকে প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ টন আলু তোলা হয়েছে। এখনও জমিতেই পড়ে রয়েছে লক্ষাধিক টন আলু। ওই জেলাতেও মোট চারটি হিমঘর মিলিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা যাবে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, মালদহে এ বছর চার লক্ষ টন আলু ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫০ শতাংশ আলু জমি থেকে তোলা হয়েছে। জেলার ১৪টি হিমঘর মিলিয়ে দু’লক্ষ টনের কিছু কম আলু রাখার পরিকাঠামো রয়েছে। এই অবস্থায় বৃষ্টির জন্য আলু নষ্টের আশঙ্কায় গত দু’দিনে তিন জেলায় জমি থেকে অধিকাংশ আলু তোলা হয়েছে। পুরাতন মালদহের আট-মাইলের বাসিন্দা আলু চাষি সুশান্ত সরকার বলেন, “খোলা বাজারে কুইন্টাল প্রতি ৩০০-৪০০ টাকা দরে আলুর বিক্রি চলছে। জানি না, জমি থেকে আলু তুলে কী হবে!”
মহকুমাশাসক (রায়গঞ্জ) কিংশুক মাইতির বক্তব্য, “কৃষকদের আলু মজুতের সমস্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’