শোক: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তরুণের স্ত্রী মামনি। পাশে তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। নিজস্ব চিত্র
উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিশের অধীনে পুলিশলাইন ও জেলার বিভিন্ন থানায় কর্মরত কনস্টেবল ও সহকারি সাব ইন্সপেক্টরদের একাংশের পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁদের পদোন্নতির নথি নিয়ে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া এলাকার পুলিশ লাইনের দফতর থেকে একটি বোলেরো গাড়িতে চেপে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন সাব ইন্সপেক্টর মহম্মদ মাসুদ (৪৪), দুই কনস্টেবল তরুণকুমার দাস (৪৫) ও সত্যব্রত বসাক। তরুণ, মাসুদ ও গাড়ি চালক প্রভাস মাহাতোর (২২) মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে তাঁদের পরিবার।
সোমবার দুপুরে তাঁদের নবান্নে গিয়ে পুলিশকর্মীদের পদোন্নতির নথি জমা দেওয়ার কথা ছিল। ভেঙে পড়েছেন জেলার পুলিশকর্মীরাও।
মালদেহ মানিকচক থানার এনায়তপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ জেলা রিজার্ভ পুলিশের ওয়েলফেয়ার বিভাগের ওসি ছিলেন! জেলার পুলিশকর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা, পদোন্নতি সহ বিভিন্ন কল্যানমূলক কাজ পরিচালনা করতেন তিনি। পুলিশকর্মীদের যে কোনও আপদ-বিপদে তাঁকে পাশে দাঁড়াতে দেখা যেত। স্ত্রী ও একমেয়েকে নিয়ে তিনি কর্ণজোড়া এলাকায় সরকারি আবাসনে থাকতেন। তরুণ ও সত্যব্রত ওই বিভাগেরই কনস্টেবল। তরুণের বাড়ি বর্ধমানের কাটোয়া এলাকায়! তরুণ রায়গঞ্জের দেবীনগর এলাকায় স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবালের দাবি, ‘‘দুর্ঘটনায় দুই পুলিশকর্মী সহ গাড়ির চালকের মৃত্যু আমরা কেউই মেনে নিতে পারছি না, মৃতদের পরিবার সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সবরকম সুযোগ সুবিধা পাবেন। জখম পুলিশকর্মীর চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
চালক প্রভাসের বাবা পেশায় দিনমজুর দেবেন ও মা দুলালি রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় জেলা পুলিশ লাইনের দফতরে গিয়ে জেলা পুলিশের কর্তাদের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুলালি বলেন, ‘‘প্রভাস আমাদের বড় ছেলে ছিল। আমাদের ছোটছেলে নেপালে দিনমজুরির কাজ করে। প্রভাসের আয়ে সংসার চলত। আমাদের সংসার ভেসে যাবে।’’
অন্য দিকে, স্বামীর মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে এদিন সকালেই আটবছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে এনায়তপুর এলাকার শ্বশুরবাড়িতে চলে যান মাসুদের স্ত্রী ইয়াসিনা খাতুন! জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, স্বামীর মৃত্যুর খবর জানার পরেই শোকে বাগ্রুদ্ধ হয়ে পড়েন ইয়াসিনা!
তরুণের স্ত্রী মামনি তাঁদের ছয়বছর বয়সী ছেলে অমিতাভ ও চারবছর বয়সী মেয়ে শ্রেয়সীকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। মামনির কথায়, ‘‘তাঁর মৃত্যুর খবর পেলাম। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে অনাথ হয়ে পড়লাম। কীভাবে ওদেরকে মানুষ করব, এখন সেকথাই ভাবছি।’’