জয়েন্টের পরীক্ষায় ‘ব্লু-টুথ’ ব্যবহার করে কেউ নকলের চেষ্টা করছে এই অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় হল পরীক্ষা কেন্দ্র। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ এবং মেডিক্যাল কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, পরীক্ষা শুরুর আধ ঘন্টা পরে বাইরে থেকে জয়েন্ট এনট্রান্স বোর্ডের যে পর্যবেক্ষক গিয়েছিলেন, তাঁর কাছে ‘ব্লু টুথ ডিটেকটর’ ছিল। তাতে পরীক্ষা কেন্দ্রের দুটি ঘরে কয়েকজন পরীক্ষার্থী ব্লু টুথ ব্যবহার করছেন বলে তাঁর যন্ত্রে ধরা পড়ে। তিনি বিষয়টি দেখার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানান। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়। অন্তত আধ ঘন্টা তল্লাশি এবং পরীক্ষার শেষ পর্যন্ত নজরদারির চালালেও অভিযুক্ত কাউকে ধরতে পারেনি তারা। কে বা কারা ব্লু টুথ ব্যাবহার করছিল তার খোঁজ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়েছে পুলিশকে। পুরো ঘটনাটি কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জয়েন্ট এনট্রান্স বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, ‘‘পর্যবেক্ষকের কাছ থেকে অভিযোগ মেলার পরেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। পুলিশকে জানানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কাউকে ধরা যায়নি।’’ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরই একটি সূত্রই জানিয়েছে, এ দিন ওই কেন্দ্রে ৫২৭ জন পরীক্ষা দিয়েছেন। তার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজের লেকচার থিয়েটার-৩ এবং লেকচার থিয়েটার-৪ এই দুটি ঘরে যারা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তাদের কেউ ব্লু টুথ ব্যবহার করছেন বলে পর্যবেক্ষকের কাছে থাকা বিশেষ যন্ত্রে ধরা পড়ে। এই ব্লু-টুথের মাধ্যমে বাইরে কারও সঙ্গে কথা বলে বা প্রশ্ন বলে উত্তর জেনে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল বলে সন্দেহ পরীক্ষার কেন্দ্রে নজরদারির দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-অধ্যাপকদের।
জয়েন্ট এনট্রান্সে নকল কিছু নতুন নয়। ভুয়ো পরীক্ষার্থী হয়ে পরীক্ষা দেওয়া থেকে নানা ধরনের জালিয়াতির কথা জানা গিয়েছে এই পরীক্ষায়। এ বছর আদালতের নির্দেশ মেনে ডাক্তারিতে দেশব্যাপী অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা হচ্ছে। ডাক্তারির ক্ষেত্রে রাজ্যের জয়েন্ট এনট্রান্স পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। সেই মতো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রার্থীরাই এ দিন পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও পরীক্ষা কেন্দ্র হয়। বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পরীক্ষা চলে। কিন্তু পরীক্ষার মাঝপথে হলের মধ্যে পরীক্ষার্থীরা কেউ ব্লু টুথ ব্যবহার করছেন জানার পরেই তোলপাড় শুরু হয় কলেজে। এমনিতে এ দিন পরীক্ষার জন্য কলেজের যে অংশে পরীক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে সেই সংলগ্ন কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, ফরেনসিক বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছিল। বাইরের লোকজনের যাতাযাতও নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। বিশেষ যন্ত্রে যখন হলের মধ্যে ব্লু টুথ ব্যবহারের আভাস মেলে তখন প্রশ্ন ওঠে, পরীক্ষা হলের বাইরে কেউ ব্যবহার করছেন বা কলেজের ওয়াইফাই পরিষেবার জন্য তা মনে হচ্ছে কি না? তবে বাইরে থেকে আসা পর্যবেক্ষক জানান, তেমন ব্যাপার নেই। পরীক্ষা কেন্দ্রেই পরীক্ষার্থীদের কেউ ব্যবহার করছে। বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষকে খুঁজে দেখতে বলেন। আধ ঘন্টা পর তিনি চলে যান। অভিযোগ, এর পর কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে প্রথমে তারা নির্দিষ্ট দুটি শ্রেণিকক্ষের ছাত্রছাত্রীদের তল্লাশিতে রাজি হননি। তারা দাবি করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তারা দেখছেন। পড়ুয়াদের তল্লাশি করার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে তা না জানালে তারা করতে পারবেন না। এর পর কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে লিখিত ভাবে পুলিশকে জানানো হলে ছাত্রীদের জন্য মহিলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি হয়। তবে পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেই বিষয়টিও দেখতে হয়েছে।