বনে নজরদারি কই, প্রশ্ন

পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, নজরদারির খামতির সুযোগ নিয়েই উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে গবাদি পশু ‘চারণে’র প্রবণতা বেড়েছে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০৮:০৬
Share:

দাবানল: সোমবার রাতে এ বাবেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে জলদাপাড়ার জঙ্গলের একাংশে। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে

এত নজরদারি। সচেতনতার উদ্যোগ। তার পরেও কেন জঙ্গলে আটকানো যায় না অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা? জলদাপাড়ার মালঙ্গি বিটের বিস্তীর্ণ এলাকার ঘাসবন এক রাতেই আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ফের ওই প্রশ্ন উঠেছে। বন দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অভিযোগ, নজরদারিতে বন দফতরের কড়াকড়ি তো বাস্তবে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’!

Advertisement

পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, নজরদারির খামতির সুযোগ নিয়েই উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে গবাদি পশু ‘চারণে’র প্রবণতা বেড়েছে। বনাঞ্চলের ভিতরে বা লাগোয়া এলাকার নদীতে মাছ ধরতেও যান অনেকে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিশাল এলাকার জঙ্গলে রাতের অন্ধকারে জঙ্গলে ঢুকে পড়েন। শুকনো কাঠ সংগ্রহও চলে। কাঠ মাফিয়া, চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগও নানা সময়ে উঠেছে। এই বহিরাগতরাই জ্বলন্ত বিড়ি বা সিগারেটের টুকরো ফেলে দেয়। শীতের শেষে শুষ্ক আবহাওয়ায় ওই আগুন থেকেই বিপদের আশঙ্কা বাড়ে জঙ্গলে। ঘাস পুড়িয়ে দেওয়া হলে নতুন ঘাস দ্রুত গজানোর ভাবনাতেও শীতের শেষে জঙ্গলে ঘাসবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “জলদাপাড়ার জঙ্গল চারদিক থেকেই খোলামেলা। ওই এলাকায় নজর রাখার মতো পর্যাপ্ত কর্মীর ঘাটতি বিরাট সমস্যা। নজরদারির খামতির সুযোগই নিচ্ছে কিছু মানুষ।” সংগঠনের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “নজরদারির খামতির সুযোগেই বন ও বন্যপ্রাণীরা বিপন্ন।” অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজ়ার্ভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “পর্যটকদের নিয়ে নানা সময়ে যে কড়াকড়ি হয়, তেমনটা কিন্তু জঙ্গলে বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যাপারে নেই। এবার জলদাপাড়ার তৃণভূমির ওপর দিয়ে বিপর্যয়টা চলে গিয়েছে। না হলে আরেকটা অ্যামাজনের মত অবস্থার আশঙ্কা কিন্তু ছিল।”

Advertisement

বন দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, নজরদারি থেকে সচেতনতা বাড়ানোর মতো কোনও কাজেই খামতি রাখা হয় না। সেজন্য দ্রুততার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, “বাইরের লোকজন যাতে জঙ্গল এলাকায় ঢুকতে না পারে, সেদিকে নজরদারি রয়েছে। তা আরও বাড়ানো হচ্ছে। আর প্রাকৃতিক ভাবে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে আগুন কিন্তু সাধারণত লাগে না।” কোচবিহার বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “মোটামুটি নিশ্চিত, ফেলে যাওয়া জ্বলন্ত বিড়ি বা সিগারেট থেকেই ওই ঘটনা হয়েছে।” বন দফতর সূত্রের দাবি, সোমবারেও ওয়াচ-টাওয়ার থেকে এক ব্যক্তিকে দেখে ধরার চেষ্টাও করেছিলেন বনকর্মীরা। সে পালিয়ে যায়। এক বন কর্তার কথায়, “বিশাল এলাকা, কোথাও তো সীমানা প্রাচীর বলে কিছু নেই। লোকবল কম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement