প্রতিবাদে কাকতাড়ুয়া।
সিঙ্গুরের প্রভাব পড়ল সাবেক ছিটেও। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই সাবেক ছিটমহলের জমি সমস্যার সমাধান চেয়ে সরব হলেন সেখানকার বাসিন্দারাও।
তাঁরা অভিযোগ তুলেছেন, ছিটমহল বিনিময়ের এক বছর পেরিয়ে গেলেও কৃষকদের হাতে জমি তুলে দিতে প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি। তাই জমি নিয়ে তাঁরা উদ্বেগে আছেন। কয়েকটি জায়গায় জমি দখলের একটি ছকও তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। কোচবিহার জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “ওই ব্যাপারে কাজ চলছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, সাবেক ছিটমহলে প্রায় ৭ হাজার ১১০ একর জমি রয়েছে। সবমিলিয়ে পরিবার রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার। দীর্ঘদিন ওই জমি সম্বল করেই বাসিন্দারা জীবিকা নির্বাহ করেছেন। অধিকাংশেরই কাছে জমির নথি নেই। বাংলাদেশি ছিটমহল হওয়ায় নতুন করে কাগজ তৈরি সম্ভবও ছিল না। বিপদের সময় অনেকে ভারতীয় বাসিন্দাদের কাছেও জমি বিক্রি করেছিলেন। যদিও আইন অনুযায়ী কোনও ভারতীয় বাংলাদেশি ছিটমহলে জমি কিনতে পারেন না। তার পরেও অনেকে সেই জমি কিনে সেখানে চাষাবাদ করেছেন। ছিটমহল বিনিময়ের পরে সেই জমি সমস্যা মিটবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বছর ঘুরলেও এখনও জমি সমীক্ষার কাজই শেষ হয়নি। মানব অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ভূমি সমীক্ষার নীতি বলে কিছু নেই। যেটুকু কাজ চলছে তাও খুব ঢিমেতালে। এই সুযোগে জমি দখলের জন্য একটি দুষ্টচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দ্রুত জমি সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।” তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই জমি বন্টনের কাজ শেষ হয়েছে।
বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, যখন ছিটমহল ছিল সেই সময় তাঁরা নিজেরাই একটি আইনে চলতেন। তাই জমি নিয়ে তেমন কোনও ভয় ছিল না তাঁদের। ছিটমহল সমস্যা সমাধান হওয়ার পরে সব জমি সরকারের হাতে চলে গিয়েছে। এখন জমি নাম কা ওয়াস্তে তাঁদের দখলে রয়েছে। সরকার যতক্ষণ না ওই জমি তাঁদের মধ্যে বন্টন করে দিচ্ছেন ততদিন তাঁদের আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছে। সাবেক ছিটমহলের মধ্য মশালডাঙার এক বাসিন্দা বেল্লাল হোসেন বলেন, “খবরের কাগজে দেখেছি সিঙ্গুরের মানুষ জমির অধিকার পাচ্ছেন। আমাদের জমিও তো এখন সরকারের হাতে রয়েছে। সরকার আমাদেরও অধিকার দিক।” — নিজস্ব চিত্র