গরমে স্নান। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে। ছবি: বিনোদ দাস
বেশ কয়েক দিন ধরেই দুপুরের পরে গরুমারা জঙ্গল থেকে কখনও দাঁতাল হাতি, কখনও বাইসন, হরিণদের ইতিউতি রাস্তায় বেরিয়ে আসতে দেখছেন পর্যটকেরা। বুনোদের রাস্তায় দেখে জঙ্গল ভ্রমণে বার হওয়া পর্যটকেরা বেজায় খুশি। তবে নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, জঙ্গলের ভিতরেও গরমে অস্থির হয়ে উঠছে বলেই বেরিয়ে আসছে বুনোর দল। বনকর্মীদের দাবি, জঙ্গলের ভিতর সকালের দিকে গরম তুলনামূলক কম থাকলেও দুপুরের পরে তাপমাত্রা বেশি থাকলে গরম বাড়ে। জঙ্গলের অন্দরমহল তুলনামূলক কম গরম থাকলেও যে ভাবে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক উড়ান নিয়েছে, তাতে বুনোদেরও অস্বস্তি হওয়ার কথা। শুক্রবারও জঙ্গল এবং লাগোয়া জনপদগুলিতে গরমের ছোবল অব্যাহত ছিল। জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি— দুই শহরই পুড়েছে। এ দিনও নিস্তেজ ছিল চা বাগিচা। পাতা উৎপাদন কমেছে। চা কর্মীরা জানাচ্ছেন, রোদে ঝলসে যাচ্ছে চা কুঁড়ি।
জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির মতো শহরে গরম বাড়লেই বাসিন্দারা পাহাড়মুখী হন। শুক্রবার দেখা গিয়েছে উলটপুরাণ। গরমের হাত থেকে বাঁচতে পাহাড় ছাড়ছেন পর্যটকেরা। কারণ, উষ্ণতা বেড়েছে উঁচু জনপদেও। তার উপর পাহাড়ের বেশির ভাগ হোটেলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) নেই, পাখা নেই। কালিম্পং এবং কার্শিয়াঙে এই সমস্যা বেশি। দার্জিলিং তুলনামূলক ভাবে কম উষ্ণ। শৈলশহরের কিছু জায়গায় কুয়াশাও দেখা গিয়েছিল গত দু’দিন। পাহাড় ফেরত পর্যটক মৌ গুপ্ত বলেন, ‘‘কার্শিয়াং পর্যন্ত পৌঁছে তো বুঝতেই পারিনি, সমতলে আছি, না কি পাহাড়ে! তবে দার্জিলিঙে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছিলাম।’’
এ দিন শিলিগুড়ির তাপমাত্রা মোবাইল ফোনে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখিয়েছে। আববহাওয়াবিদেরা বলেন, যে তাপমাত্রা পারদে মাপা হয়, গ্রীষ্মকালে তার চেয়ে খানিকটা বেশি তাপমানই অনুভূত হয়। অর্থাৎ, শিলিগুড়িতে তাপমাত্রা যখন ৩৯ ডিগ্রি, সে সময় অনুভূত হয়েছে ৪০ ডিগ্রিরও বেশি। জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের দফতরের মতো কাজের চত্বরও এ দিন ছিল ফাঁকা। পোস্ট অফিস মোড়ের ট্র্যাফিক আলোর সামনেও যানজট দেখা যায়নি। শিলিগুড়ি শহরের রাস্তাও ফাঁকা ছিল। চা শ্রমিকরদের দল বেঁধে ছাতা মাথায় দিয়ে কাজে যেতে দেখা গিয়েছে ডুয়ার্স-তরাইয়ে। দাবদাহের জেরে চা পাতার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চা বাগান পরিচালকদের সংগঠন ‘টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র উত্তরবঙ্গের অন্যতম কর্তা সুমিত ঘোষ বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা পাতা তুলতে যাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু পাতাই তো মিলছে না! গরমের জেরে নতুন পাতার দেখা নেই।’’
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, পাহাড়ের কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও আপাতত তাপমাত্রা কমছে না। আগামী সাত দিন তাপমাত্রা প্রায় একই রকম থাকবে।