ছড়ায় ছন্দে জমাটি প্রচার জেলা জুড়েই

কোথাও পরিচিত ঠান্ডা তেলের বিজ্ঞাপনের ছাপ। কোথাও আবার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তৈরি ছড়ার ছন্দ! কোচবিহারে ভোটের উত্তাপ বাড়তে শুরু করতেই দেওয়াল লিখনে নজর কাড়ার এমন লড়াই জমে উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০২:২৯
Share:

কোথাও পরিচিত ঠান্ডা তেলের বিজ্ঞাপনের ছাপ। কোথাও আবার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তৈরি ছড়ার ছন্দ! কোচবিহারে ভোটের উত্তাপ বাড়তে শুরু করতেই দেওয়াল লিখনে নজর কাড়ার এমন লড়াই জমে উঠেছে। ইতিমধ্যে পাড়ার দেওয়ালের পাশাপাশি ওই ছড়ার যুদ্ধ ছড়িয়েছে ফেসবুকেও। আপাতত বাম ও তৃণমূল শিবিরের ওই দেওয়াল লিখন ঘিরেই অবশ্য রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তবে কংগ্রেস, বিজেপি শিবিরও বসে নেই।

Advertisement

প্রথমে তৃণমূল শিবিরের কথাই ধরা যাক। নাটাবাড়ি বিধানসভা এলাকায় ইতিমধ্যে বেশকিছু দেওয়াল লিখেছেন তৃণমূল কর্মীরা। বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, ওই তালিকায় নজর কাড়ছে একটি দেওয়াল লিখনের বিষয়বস্তু। তাতে নাকি পরিচিত ঠান্ডা তেলের বিজ্ঞাপনের ছাপ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। কী লেখা হয়েছে ? তৃণমূলের এককর্মী জানাচ্ছেন, “ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল / নাটাবাড়ি বিধানসভায় জিতবে তৃণমূল।” কোচবিহারের একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে বামেদের ছড়ায় উঠে আবার আসছে এ বারের জোট রাজনীতির প্রসঙ্গ। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মিলিয়ে দেওয়াল জুড়ে নীল, লাল রঙে ফুটে উঠছে, “সিংহ, হাত, কাস্তে, হাতুড়ি-তারা/ তৃণমূল হবে এ বার বাংলা ছাড়া।” যার পাল্টা কোথাও আবার তৃণমূল শিবির বলছে, “ চোখ খুললেই জোড়া ফুল/ সারা বাংলায় তৃণমূল।” দেওয়াল যুদ্ধে বিরোধীদের জবাব, “ ২০১১= তৃণমূল / ২০১৬ = নির্মূল” কিংবা ‘‘জনগণ দিচ্ছে ডাক, তৃণমূল নিপাত যাক।’’ তবে জবাব আছে শাসক দলেরও, ‘‘হাতে হাত ঘাস ফুল, ঘরে ঘরে তৃণমূল।’’

কারা কাটছেন এমন সব ছড়া ? নজরকাড়া প্রচারের পরিকল্পনা? দলীয় সূত্রের খবর, মূলত ছাত্র ও যুব সংগঠনের সমর্থকরাই নিজেদের শিবিরের ওই প্রচারের নকশা তৈরির হোমওয়ার্ক করছেন। সেটা জেলা নেতা কিংবা স্থানীয় প্রার্থীকে দেখিয়ে ছাড়পত্র নিয়েই তুলির টান উঠছে পাড়ার দেওয়াল জুড়ে। বাকিটা সামলাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আগ্রহী দলের ফেসবুক-ফাইটে উৎসাহী কর্মীরা। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা নাটাবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ছড়ার মাধ্যমে অনেক কথা সুন্দরভাবে তুলে ধরে যায় সহজে। টিভি, সংবাদপত্র দেখে দলের কম বয়সের ছেলেদের অনেকেই ওই ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী হয়েছে। তারাই প্রচারে অভিনবত্ব আনতে দেওয়াল জুড়ে নজর কাড়ছে।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “ছড়ার মাধ্যমে প্রচারে এ বারে বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বহু দেওয়াল লেখা হয়েছে। উৎসাহী বাম কর্মী-সমর্থকরাই এ সব কাজ করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ইতিমধ্যে প্রতিটি বুথে কর্মীদের দায়িত্ব দিয়েছি। অবস্থা বুঝে নানা পোস্ট করা হচ্ছে।”

Advertisement

বিজেপি এখনও সেভাবে দেওয়াল লিখন শুরু করেনি। তবে ফেসবুকের দেওয়াল দখলে পোস্ট হচ্ছে। পাড়ার দেওয়ালের জন্যও ছড়া বাছাই করে রাখার কাজ চলছে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “প্রচারের কোনও ব্যাপারেই খামতি রাখা হবে না।” হোয়াটসঅ্যাপেও এ সব ছড়ার আদলে চালাচালি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। কংগ্রেসের দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের সভাপতি মাসুদ হাসান বলেন, “ছড়ার জবাব ছড়ায় দেওয়া হবে।”

চায়ের দোকানে আলোচনায় আসর জমালেও ভোটাররা অবশ্য অনেকেই মানছেন, পাড়া কিংবা ফেসবুকের দেওয়াল শেষ কথা বলবেনা। ভোটারদের মনের দেওয়াল দখলই আসল। যারা সেটা দখল করতে পারবে তারাই শেষ হাসি হাসবেন। যা শুনে এক নেতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই মন ছুঁয়ে যেতেই তো নজরকাড়ার ভাবনা!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement