আধো বাংলা থেকে ভাওয়াইয়া, নববর্ষে জমজমাট ভোটের প্রচার

কোথাও ঘুম ভাঙল গানে গানে। কোথাও ঘুম থেকেই উঠে শহরবাসী দেখলেন, শুভেচ্ছা জানাতে দুয়ারে হাজির স্বয়ং মেয়র। কোথাও গ্রামে হাজির বিদায়ী বিধায়ক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১০
Share:

(বাঁ দিকে) অাধো বাংলায় ভোট-ভিক্ষা ভাইচুংয়ের। পাশে সোহম। (ডান দিকে) গান ধরেছেন সুখবিলাস।ছবি: সন্দীপ পাল ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

কোথাও ঘুম ভাঙল গানে গানে। কোথাও ঘুম থেকেই উঠে শহরবাসী দেখলেন, শুভেচ্ছা জানাতে দুয়ারে হাজির স্বয়ং মেয়র। কোথাও গ্রামে হাজির বিদায়ী বিধায়ক।সাদা পাঞ্জাবি পরে সাইকেলে দেখা গেল ছুটছেন এক দলের প্রার্থী। পাহাড়ি রাস্তায় জিপ চালিয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরতে দেখা গেল ডাকসাইটে নেতাকেও। আধো বাংলা উচ্চারণে তাঁকেও শুভ নববর্ষ বলে বাঙালি ভোটারদের মন কাড়ার চেষ্টা করতেও দেখা গেল। কার্ড বিলি করে, পতাকা উড়িয়ে, বিচিত্র বর্ণের সাজগোজের মিছিলে জমজমাট হল উত্তরের পথঘাট। এমনই কিছু দৃশ্য ধরা পড়েছে আনন্দবাজারের চোখে।

Advertisement

মরা গাঙে বান

Advertisement

বর্ষবরণের উৎসব হয়েছিল জলপাইগুড়ি থানা মোড়ে। নাচ-গানের আয়োজন করেছিলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাই। সেখানে হঠাৎ হাজির কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা। তখন ভিড়ে যানজট হয়ে গিয়েছে। সুখবিলাসবাবু মঞ্চে উঠে মাইকের সামনে ধরলেন ভাওয়াইয়া। তিনটি গান শেষের পরে শ্রোতাদের কেউ কেউ অনুরোধ করলেন, ‘‘দাদা আর একটা হোক।’’ এ দিকে অন্য সভায় যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। তবে ভোটের মরসুমে অনুরোধ ফেললেন না সুখবিলাস। গাইলেন আরও একটি। দু’টি ভাওয়াইয়া গাইলেন, সঙ্গে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। উদাত্ত গলায় আবার গাইলেন, ‘‘আবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে, জয় মা বলে ভাসা তরী।’ জলপাইগুড়িতে কংগ্রেসের সংগঠনের দুর্বলতা ঢেকে দিয়েছে জোটের বাম কর্মী-সমর্থকরা। এক কর্মী বলেই ফেললেন, ‘‘মরা গাঙে বান আসা মানে হয়তো, জোটের উৎসাহকেই বোঝালেন আমাদের প্রার্থী।’’

লাইন ভেঙে গেল

শিলিগুড়ি হাসপাতাল লাগোয়া মায়ের ইচ্ছে কালীবাড়িতে সকাল থেকেই ভিড়। সকাল এগারোটা নাগাদ মন্দিরে পুজো দেওয়ার লাইন দু’টি বাঁক ঘুরে গিয়েছে। চড়া রোদে ঘেমে-নেয়ে ক্লান্তির ছাপ অনেকের চোখেমুখে। হঠাৎ দু’টি এসইউভি গাড়ি এসে দাঁড়াল। দরজা খুলে নামলেন দু’জন। এক জনের মুখ শিলিগুড়িবাসীর চেনা হয়ে গিয়েছে। অন্য জনকে দেখা গিয়েছে শুধু পর্দাতেই। সাদা পাঞ্জাবি, হলদে কাচের রোদ চশমা। মন্দিরে ঢুকতেই ফিসফিস শুরু হয়ে গেল, ‘সোহম সোহম’। মন্দিরে ঢুকেই সোহম বললেন, ‘‘লাইনে আমরাও আছি কিন্তু। আমরাও পুজো দেব।’’ দু’হাতে ধরে থাকা ফুল-বেলপাতা, এক হাতে মোবাইল ধরে সেলফি তুলতে উদ্যত হলেন এক যুবতী। তা দেখে সংক্রমণের মতো সেলফি শুরু হল কালীমন্দিরে। পুজোর লাইন তত ক্ষণে এলোমেলো, ভিড় ছেঁকে ধরেছে সোহম ও ভাইচুংকে।

শুভেচ্ছা, আশীর্বাদ দিন

পদযাত্রায় বেরিয়ে প্রার্থীরা চেনা মুখ দেখলেই বললেন, শুভ নববর্ষ। আলিপুরদুয়ারে কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন সরকার এ দিন সকালে শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে বললেন, ‘‘প্রচার কোথায়! আমি তো নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে বেরিয়েছিলাম। বড়দের থেকে আশীর্বাদও চাইলাম।’’ বাড়ি-দোকানে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তী শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে রোড শো করে তারপর বীরপাড়া এলাকায় দু’একটি কারখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান। এরপরে সলসলাবাড়ি এলাকায় গদাধর নদীতে অষ্টমী স্নানের মেলায় পুজো দিতে যান সৌরভবাবু। আরএসপি প্রার্থী নির্মল দাস অবশ্য এ দিন নিজের পাড়া এবং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গেই শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। শিলিগুড়ির মেয়র তথা জোটের বাম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যও এ দিন নিজের পাড়া থেকে শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেন। এরপর তিনি অন্য ওয়ার্ডে গিয়েছিলেন।

স্নানমেলায় উদয়ন

এ দিন কোচবিহারের প্রার্থীদের দেখা মিলল অষ্টমী স্নানের মেলা এবং মদনমোহন মন্দিরে। কেউ বা রাজনৈতিক পদযাত্রার বদলে এ দিন সকালে পা মেলালেন প্রভাতফেরিতে। যুযুধান প্রার্থীদের মধ্যে এ দিন বর্ষবরণ এবং প্রচারে মিল দেখা গেল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিনহাটার টিয়াদহের স্নানমেলায় যান ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। এদিন সকালে কোচবিহার ভারত কলোনি এলাকায় নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত একটি প্রভাতফেরিতে অংশ নেন কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নিখিলরঞ্জন দে। পরে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন। তুফানগঞ্জ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল চৌধুরীও এদিন কোচবিহার মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন। বাসিন্দাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রার্থীরা সকলেই।

কার্ড বিলি, বই প্রকাশ

১৪২৩-কে স্বাগত জানিয়ে একটি কার্ড। খানিকটা লম্বাটে। রবীন্দ্রনাথের ছবি এবং কবিতার লাইন। নীচের দিকে সকলের প্রীতি এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে অশোক ভট্টাচার্যের নাম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এমনই কার্ড বা শুভেচ্ছাপত্র বিলি করেছেন শিলিগুড়ির বিরোধী জোটের বাম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। কার্ডে অবশ্য রাজনৈতিক কোনও কথা নেই। রবীন্দ্রনাথের কবিতার ‘‘আমরা চলি সমুখপানে, কে আমাদের বাঁধবে’’ দিয়ে কার্ডে লেখা শুরু হয়েছে। কবিতা শেষ হয়েছে, ‘‘কাঁদবে ওরা কাঁদবে।’’ অশোকবাবুর সঙ্গে থাকা এক নেতার কথায়, ‘‘যাঁরা বোঝার তাঁরা বুঝবে।’’ এ দিন বিকেলে অশোকবাবুর লেখা জলবায়ু বিষয়ক বই প্রকাশ পয়েছে।

গৌতমের হালখাতা

সকালে রাজফাপড়ি এলাকায় পদযাত্রা করেছেন বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি এবারেও ফুলবাড়ি ডাবগ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী। সকালের পুরোটাই ভোট প্রচার সেরেছেন। তবে বিকেলের দিকে কোনও কর্মসূচি রাখেননি। বিকেল রাখা ছিল হালখাতার জন্য। জানালেন, ‘‘বিকেলে হালখাতা করতে যেতে হবে। অনেকদিনের অভ্যেস তো।’’ হালখাতার অভ্যেসও থাকল, প্রচারও হল।

সূর্যের শপথ

আমবাড়ির তারঘেরা মাঠে এ দিন জনসভা ছিল সূর্যকান্ত মিশ্রের। সভাস্থলের কিছুটা দূরেই অষ্টমী স্নানের মেলা ছিল। নদীতে পুণ্যডুব দিয়ে অনেকেই সভা শুনতে এসেছিলেন। তাঁদের কপালে লালটিপ। সূর্যবাবুও বক্তব্যে সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন। বললেন, ‘‘আজ নতুন বছরের প্রথম দিন। নতুন বছরে রাজ্যে নতুন সরকার আসবে। বছরের প্রথম দিন আসুন সকলে শপথ নিন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement