উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ। ছবি: বিনোদ দাস
হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট গড়তে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নেওয়া হবে না এবং সে জন্য অন্যত্র জমি দেখা হবে বলে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বুধবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে তিনি এ কথা জানান। এর ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে জমি হস্তান্তরের অভিযোগ তুলে আন্দোলন করছিলেন যাঁরা, তাঁরা কিছুটা স্বস্তিতে। তবে কর্মসমিতিতে সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত তাঁরা নিশ্চিত হতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন।
উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আমার কাছে যা খবর, ওই প্রতিষ্ঠান করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নেওয়া হচ্ছে না। পর্যটন দফতর অন্যত্র জমি দেখবে। জমি যে নেওয়া হচ্ছে না, তা বলেই দিতে পারতাম। কিন্তু মন্ত্রিসভায় যেহেতু সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাই আবার মন্ত্রিসভাই এটার অনুমোদন করবে। এখন এটুকুই বলছি, সরকার খতিয়ে দেখছে, অন্য কোথায় এই প্রকল্প হতে পারে। তবে উত্তরবঙ্গেই হবে।’’
তবে আন্দোলনের ‘চাপে’ আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা মানেননি মন্ত্রী। দাবি করেন, ‘‘আন্দোলন কোনও বিষয় নয়। আমাদের কাছে রিপোর্ট ছিল, আন্দোলন তিন-চার জন করছিলেন। তাঁদের চাপে কিছু হয় না কি?’’ তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রস্তাব পেলে, তাদের অধীনে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালুর বিষয়টিও ভেবে দেখা হবে। আন্দোলনকারীরা পরে দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে জমির ‘ইউজ়ার রাইট’ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল না হওয়া পর্যন্ত, তাঁরা আন্দোলন থামাবেন না।
উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র এ দিন দাবি করেন, তিনি বারবারই জানিয়েছিলেন কোনও বেসরকারি সংস্থা বা ‘কর্পোরেট সেক্টর’কে জমি দেওয়া হচ্ছে না এবং এ বিষয়ে প্রচার ‘বিভ্রান্তিমূলক’ ছিল। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর এবং পর্যটন দফতরের সহায়তাকে মান্যতা দিয়ে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়ে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার। তবে তা গ্রহণ করিনি। সে সব ব্যবস্থাও কিছু করা হয়নি।’’ গত ২৫ নভেম্বর কর্মসমিতির বৈঠকে ক্যাম্পাসের পাঁচ একর জমির ‘ইউজ়ার রাইট’ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। তা নিয়ে ১৩ জন সদস্যের মধ্যে কলা, বাণিজ্য এবং আইন বিভাগের ডিন রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তি তুলেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন শিক্ষক সমিতির চার প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী। তাঁকে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তির বিষয়টি বিস্তারিত জানানো হয়নি, তা জানতে চান। শিক্ষকদের কেউ কেউ দাবি করেন, তাঁরা জানালেও উপাচার্য তাঁদের কথা ‘শুনতে’ চাননি। তা নিয়ে উপাচার্যের দফতরে কার্যত তর্কাতর্কি হয়। কলা বিভাগের ডিন দাবি করেন, কর্মসমিতিতে আপত্তি জানিয়ে তিনি যে সব কথা বলেছিলেন, উপাচার্য সেগুলো নথিভুক্ত করে ওয়েবসাইটে দেননি। উপাচার্য জানিয়ে দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়ে, কতটুকু প্রকাশ্যে আনা হবে, সে সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন। তবে এই আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি।
এ দিন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আসছেন জেনে শিক্ষক সমিতির পাশাপাশি, ‘উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও মঞ্চ’-এর তরফেও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাওয়া হয়। মন্ত্রী ক্যাম্পাসে ঢোকার আগে, প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ‘স্টুডেন্ট ইউনিটি’র অভিজিৎ সান্যালকে তৃণমূল নেতা মিঠুন বৈশ্য মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি জানান। তবে মিঠুন অভিযোগ মানেননি। জমি হস্তান্তরের অভিযোগে ফ্লেক্স-ফেস্টুন নিয়ে প্রতিবাদ জানান পড়ুয়াদের অনেকে। তবে মন্ত্রী এলে, তাঁরাস্বাগত জানান।