আত্মপ্রচার: হোর্ডিং-ব্যানারে মুখ ঢেকেছে শিলিগুড়ির। নিজস্ব চিত্র
‘প্রীতি-শুভেচ্ছা’র হোর্ডিং-ব্যানারে মুখ ঢেকেছে শিলিগুড়ি। একাধিক মন্ত্রী, জেলা স্তরের নেতা তো বটেই, এলাকার কাউন্সিলর, বিরোধী দলের ছোট-মাঝারি জনপ্রতিনিধিরাও কম যান না। তাঁদের ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা-বার্তায় শিলিগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তার মোড়, দুধারে দেখা যাচ্ছে। শহরবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, শুভেচ্ছা-বার্তার অছিলায় আত্মপ্রচার চালানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তাই শহরে ব্যানার-হোর্ডিং দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করার দাবি উঠেছে শহরে। এমনকী, পুরসভা-প্রশাসন কেন ব্যানার, পোস্টারের জন্য কর আদায় করবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
কিন্তু, শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য এখনই কোনও পদক্ষেপ করতে চান না। ঘটনাচক্রে, তাঁর নাম সম্বলিত একাধিক হোর্ডিং, ব্যানারও রয়েছে শহরের নানা এলাকায়। মেয়র বলেন, ‘‘ডেঙ্গি বিষয়ক সচেতনতার জন্য কিছু ব্যানার, হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। তাতে পুজোর শুভেচ্ছাও জানিয়েছি। অযথা নিজের ছবি দিয়ে আত্মপ্রচারের হোর্ডিং, ব্যানার দিইনি। কারা তা দিয়েছেন, শহরবাসী দেখছেন।’’ কিন্তু, পুরসভা কেন ব্যানার, হোর্ডিংয়ের জন্য কর আদায় করছে না, সেই প্রশ্নে মেয়র জানান, হোর্ডিং-ব্যানার দিতে গেলে পুরসভার অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু, পুজোর বাজারে যে অনেকেই অনুমতি নেয়নি, সেটাও মেয়র মানছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে সব কাউন্সিলরের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করব।’’ এর পরে মেয়রের সংযোজন, শিলিগুড়িতে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের হোর্ডিংয়ের শহরের মুখ ঢেকে গিয়েছে। পুরসভার হিসেবে শিলিগুড়িতে তৃণমূলের নেতাদের হোর্ডিংই বেশি। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের ছবি দেওয়া হোর্ডিং রয়েছে সব ওয়ার্ডেই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, রাষ্ট্রমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা, এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর শুভেচ্ছাও কম নেই। শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দল নেতা রঞ্জন সরকার ব্যানার-হোর্ডিংয়ে তাঁর স্তরের সব নেতাদের ছাপিয়ে গিয়েছেন বলে ধারনা পুরসভার। এনজেপি থেকে চম্পাসারি, দার্জিলিং মোড় থেকে শক্তিগড়, হাকিমাপাড়া, আশ্রমপাড়া, সুভাষপল্লি সব জায়গাতেই রাস্তার মোড়, অলিগলিতে রঞ্জনের শুভেচ্ছা বার্তার উপস্থিতি।
এমন যথেচ্ছ শুভেচ্ছা-বার্তার বন্যা রুখবে কে, সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন শহরের নাগরিক সমাজ। শিলিগুড়ির নাট্যকর্মী পার্থ চৌধুরী, আইনজীবী রতন বণিক সহ অনেকেই বলেন, ‘‘পুরসভা-প্রশাসনের এটা দেখার কথা। কোথায় শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া যাবে তা নির্দিষ্ট করে কর আদায় হোক। পুরসভার আইনও তো আছে। সেটা কেউ মানছেন না দেখেও পুরসভা নির্বিকার। তা হলে আইনটা তুলে দেওয়া হোক।’’ মেয়র অবশ্য জানান, পুজোর পরেও হোর্ডিং-ব্যানার থাকলে তখন পদক্ষেপ করা হবে।
ঘটনা হল, মোটামুটি সব হোর্ডিং-ব্যানারেই পুজো, বিজয়া দশমী, দেওয়ালি ও ছট পুজর শুভেচ্ছা একযোগে জানানো হয়েছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘একটা বার্তাতেই সব উৎসবের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছি। কোনও পুজোকেই বাদ দিইনি। ছট পুজোর পরে সব সরিয়ে নেওয়া হবে।’’ তাই ছট-পুজো অবধি যাবতীয় ব্যানার-হোর্ডিং যথাস্থানে থাকছে বলেই ধারণা শহরবাসীর।