মালদহে দুয়ারে সরকার শিবির বাতিল কেন? — নিজস্ব চিত্র।
মালদহে বাতিল দুয়ারে সরকারের শিবির। শেষ মুহূর্তে বাতিল হওয়ার জেরে কাজ নিয়ে আসা সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। সকলেই দিনমজুর, ফলে এক দিনের মজুরি ছেড়েই এসেছিলেন শিবিরে। তাঁদের দাবি, এর ক্ষতিপূরণ করবে কোন সরকার? মালদহের গাজোলের আলাল গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়নায় প্যান্ডেলের রং গেরুয়া করার কারণেই শিবির বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। কর্মীর অভাবে শিবির করা গেল না, যুক্তি স্থানীয় বিডিওর।
রাজ্যে চলছে দুয়ারে সরকারের শিবির। লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী— অন্ততপক্ষে৩ ৫টি সরকারি প্রকল্পে নাম নথিভুক্তিকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে এই শিবির থেকে। সারা দিনই নির্দিষ্ট শিবিরগুলিতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। বুধবার তেমনই শিবির বসার কথা ছিল মালদহের গাজোলের আলাল পঞ্চায়েতের ময়নায়। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে শিবির বসছে না সেখানে। বিজেপির অভিযোগ, শিবিরের প্যান্ডেলের রং গেরুয়া করা হয়েছে। এই কারণেই শিবির বাতিল করেছে তৃণমূল সরকার। পঞ্চায়েত প্রধান তথা স্থানীয় বিজেপি নেত্রী উমা মণ্ডল বলেন, ‘‘কালকেই বিডিও সাহেবের ফোন এসেছিল। তিনি প্যান্ডেলের কথা বলছিলেন। প্যান্ডেলে কমলা রং দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রথমে বলেছিলেন যে, অরেঞ্জ রংটা যেন সরানো হয়, না হলে আপনাদের এখানে শিবির বাতিল করা হবে। কী রং হবে, সেটা আমার জানা নেই। এর জন্য মানুষের খুবই ভোগান্তি হল। এটা ঠিক হল না। আমি বিজেপি করি বলেই আমাকে এ ভাবে হেনস্থা হতে হচ্ছে।’’
যদিও বিজেপি প্রধানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গাজোলের বিডিও অরুণকুমার সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘কর্মী কম। তাই আজ (বুধবার) ক্যাম্প করা সম্ভব হচ্ছে না। রঙের কোনও বিষয় নেই। আগামী দু’দিনের মধ্যে ওই এলাকায় আবার ক্যাম্প হবে।’’ বিজেপির তোলা অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূলও। দলের রাজ্য সম্পাদক তথা ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বিডিওর। কোনও টেকনিক্যাল ফল্ট হয়েছে হয়তো। এটা বিডিওই বলতে পারবেন। গ্রামাঞ্চলে বিডিওই সব করেন।’’
রঙের কারণেই কি বাতিল হয়ে গেল সরকারি শিবির? চাপানউতরের জেরে তা এখনও অস্পষ্ট। অদূর ভবিষ্যতে তা স্পষ্ট হবে, এমন আশাও করেন না ভোগান্তির শিকার মানুষগুলি। কিন্তু সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নেবেন বলে বুধবার কাজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন বহু মানুষ। কিন্তু শিবির বাতিল হওয়ায় তাঁরা পড়েছেন অথৈ জলে। কাজকর্ম ছেড়ে কেউ লক্ষ্মীর ভান্ডার আবার কেউ অন্য কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে হাজির হয়েছিলেন শিবিরে। কিন্তু ময়নার শিবিরে এসে জানতে পারেন, দুয়ারে সরকার শিবির বসছে না। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্যাম্পে আসা মানুষেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে খেটে খাই। আজ না গেলে টাকা পাব না। রেশনকার্ডের জন্য এসেছিলাম। আমাকে কি তৃণমূল, বিজেপি খেতে দেবে? আমরা যাব কোথায়? শুনছি, প্যান্ডেলের রং নিয়ে গোলমাল। সত্যিই যদি রঙের ব্যাপার থাকে, তা হলে তা আগে বলতে পারল না? কাজ কামাই করে আমরা আসতাম না কেউ। এগুলো করে কী লাভ হচ্ছে, বুঝি না।’’
আর এক স্থানীয় বাসিন্দা মায়া সরকার বলেন, ‘’১৩ তারিখে দুয়ারে সরকার শিবির বসবে বলে আমরা কাজ কামাই করেছি। আজকে এখানে এসেছি মজুরি ছেড়ে দিয়ে। এখানেও কাজ হল না। তা হলে চাল, ডাল কী দিয়ে কিনব? আমাদের চাল, ডাল, তেল কেনার টাকা কে দেবে? কেন আজকে বাতিল হল শিবির?’’