এমন লাইন পেরিয়েই মেলে পানীয় জল। মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
গরম পড়তেই প্রকট হয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। মালদহ জেলায় গ্রামগঞ্জের টিউবওয়েলগুলি অকেজো হয়ে থাকায় জল সঙ্কট বেড়েছে কয়েক গুণ। অথচ মালদহ জেলা পরিষদে পানীয় জল প্রকল্পের কোটি টাকা বছর খানেক ধরে পড়ে রয়েছে। জল প্রকল্পের টাকা জেলা পরিষদে পড়ে থাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।
জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের শেখ খলিল বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় পানীয় জলের ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। জেলার এখনও বহু এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের পরিষেবা পৌঁছয়নি। ফলে সাধারণ মানুষকে জলের সমস্যায় দিন কাটাতে হয়। এ দিকে, জেলা পরিষদে সেই জলের টাকা বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে।’’
টাকা থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যদিও দ্রুত সমস্যা মেটানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। জেলা পরিষদের জন স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সৈয়দ মাঞ্জারুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই বিষয় নিয়ে আমি জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাধিক বার জানিয়েছি। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন। বাস্তবে কিছুই হয়নি। আবার আমরা জানিয়েছি। খুব শীঘ্রই জল প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার কাজ শুরু হবে।’’ এই বিষয়ে জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক অমলকান্তি রায় বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মাধ্যক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই একটি পরিকল্পনা করে গ্রামের যে সমস্ত এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে, সে সব এলাকায় পানীয় জলের সুব্যবস্থা করা হবে।’’
জেলা জন স্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এখনও ৪০ শতাংশ এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল পৌঁছয় না। কাজ চলছে ১৯ শতাংশ এলাকায়। ফলে ওই এলাকাগুলির বাসিন্দাদের পানীয় জলের জন্য টিউবওয়েল ও পাত কুয়োর উপর নির্ভর করতে হয়। জেলায় সারা বছরই পানীয় জল নিয়ে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গ্রীষ্মকালে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় সেই সমস্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এই মরসুমে গ্রামের টিউবওয়েলগুলি অকেজো হয়ে যায়। জলের সন্ধানে মানুষকে দেড় থেকে দু’কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়।
এই সব এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য মালদহ জেলা পরিষদে বরাদ্দ করা হয় এক কোটি টাকা। ২০১৪ সালের মার্চ মাসের দিকে এই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সেই টাকা পড়ে থাকলে তা খরচ করা হয়নি। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন এলাকার জন্য কত টাকা বরাদ্দ করা হবে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। জটিলতার জন্য কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। যার জন্য বছর ঘুরে গেলেও জেলাবাসী সুযোগ পাননি।
জেলার মধ্যে, কালিয়াচকের ৩টি ব্লক, রতুয়া, ইংরেজবাজার, মানিকচকে আর্সেনিকের প্রকোপ রয়েছে। এই ব্লকগুলির বহু এলাকায় এখনও পরিস্রুত পানীয় জলের পরিষেবা পৌঁছয়নি। একই সঙ্গে জেলার হবিবপুর, বামনগোলা, গাজল ব্লকে পানীয় জলের ব্যাপক সমস্যা। এই সব এলাকার বাসিন্দাদের পানীয় জল হিসেবে অগভীর টিউবওয়েলের জল পান করতে হয়। এর ফলে পেটের সমস্যায় ভোগেন তাঁরা। এই সব এলাকায় জলের ব্যাপক সঙ্কট থাকলে প্রশাসনের কর্তাদের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, টাকা ফেলে না রেখে এই সব এলাকার জলের সমস্যার উন্নয়নে কাজ করলে সাধারন মানুষ খুবই উপকৃত হবেন। হবিবপুরের বাসিন্দা গোপাল সিংহ, দিলীপ সরকার প্রমুখেরা বলেন, ‘‘গ্রামে মাত্র দু’টি টিউবওয়েলের উপর আমরা নির্ভরশীল। খারাপ হয়ে গেলে সময় মতো মেরামত করা হয় না। ফলে আমাদের জলের জন্য ব্লক সদরে ছুটে হয়। সমস্যা সমাধানের দাবিতে আমরা প্রায়ই পথ অবরোধ করি। সেই সময় প্রশাসন আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এ বার আমরা আরও বৃহত্তর আনন্দোলনে নামব।’’