প্রতীকী ছবি
ফি বছর বর্ষায় শহর ভাসে। রাজবাড়ির সামনের রাস্তায় এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। সুনীতি রোডে মাছ ধরতে নেমে পড়েন অনেকে। কারও কারও বাড়িতে রান্না বসে খাটের উপরে। ভোট এলেই আশ্বাস দেওয়া হয়, এবারে প্রথম কাজ হবে নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরানো। নিকাশি ব্যবস্থা এবারে ঢেলে সাজা হবে। আর শহরে জল দাঁড়াবে না। ছবি অবশ্য পাল্টায় না কোচবিহার শহরের।
শুধু বর্ষার সময়ই নয়। অভিযোগ, সারা বছরই নিকাশিতে জল আটকে থাকে। কোথাও কোথাও তো আবর্জনায় বন্ধ হয়ে থাকে নিকাশি ব্যবস্থা। সেই আবর্জনায় জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা। মশার দাপট ক্রমশই বাড়ছে শহরে। ডেঙ্গির আতঙ্ক বাড়ে। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহ বলেন, “নিকাশি ব্যবস্থার আগের থেকে উন্নতি হয়েছে। আমরা নিয়মিত সাফাই অভিযানও করি।” বিরোধীদের কেউই অবশ্য চেয়ারম্যানের কথার সঙ্গে একমত নন। এমনকি, তৃণমূলের কাউন্সিলরদের একটি অংশও নিকাশির বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করলেন। সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকে তো প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানালেন। আসলে কোচবিহার শহরের নিকাশি ব্যবস্থা রাজ আমলের। মহারাজারা একসময় পরিকল্পনা করে এই শহর তৈরি করেছিলেন। তার ছাপ রয়েছে পরতে পরতে। কিন্তু পুরসভা যে সময় থেকে নিকাশি নালার কাজ শুরু করে, সেই সময় থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। অভিযোগ, পুরসভা কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই নিকাশি নালার কাজ করে। সেই জন্যেই জল কোন পথ দিয়ে বেরিয়ে কোথায় যাবে, তা পরিষ্কার নয়। শহরে প্রয়োজন অনুযায়ী হাইড্র্যান্ট তৈরি করা হয়নি। তাতে পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও খারাপের দিকে যাবে বলে শহরবাসীর আশঙ্কা।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দা সাহা অভিযোগ করেন, শহরের ফাঁকা জায়গার বাড়ি-ঘর, অফিস হয়ে বন্ধ হচ্ছে ক্রমশ। সেদিকে লক্ষ রেখে নিকাশি নিয়ে কোনও মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়নি। তিনি বলেন, “নিকাশি যতটুকু রয়েছে, সেগুলির বেশিরভাগ বন্ধ হয়ে রয়েছে। নতুন কোনও ভাবনা নেই।” মহানন্দ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বর্ষার সময়ে তাঁর ঘরের ভিতরে হাঁটুজল দাঁড়ায় বলে অভিযোগ। একই অভিযোগ বিজেপির কোচবিহার জেলার নেতা তথা শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিরাজ বসুর। তিনি বলেন, “দেবীবাড়ি এলাকা জলে থইথই হয়ে যায়। রাজবাড়িতে কেউ ঢুকতে পারেন না। বর্ষায় এমনই ছবি থাকে শহরের।”
এবারের নির্বাচনে নিকাশি ব্যবস্থাকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, নিকাশির হাল ফেরাতে তৃণমূল পুরোপুরি ব্যর্থ। মুখে না স্বীকার না করলেও তা নিয়ে খানিকটা ফাঁপরে তৃণমূল।