দূষণ: ডলোমাইট বোঝাই ট্রাক গিয়ে এমনই হাল রাস্তার। নিজস্ব চিত্র
গত মাসে নৈহাটি থেকে সপরিবারে ডুয়ার্স বেড়াতে এসেছিলেন বিবেক সান্যাল। ইচ্ছে ছিল ভাড়া করা গাড়িটা দাঁড় করিয়ে কোনও এক চা বাগানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু বীরপাড়া থেকে পাগলি ভুটান যাওয়ার পথে গাড়ি দাঁড় করানো তো দূর ওই রাস্তায় একবারের জন্য গাড়ির কাঁচও নামাতে পারেননি তাঁরা। কারণ সারাটা রাস্তা জুড়েই উড়ছে ডলোমাইটের গুঁড়ো। বিবেকবাবুর কথায়, ‘‘ধুলো তো নয়, যেন কুয়াশা৷ রাস্তা থেকে শুরু করে দু’ধারের সবুজ চা বাগানগুলি ওই ধুলোয় ঢেকে একেবারে সাদা হয়ে গিয়েছে। এই দৃশ্য দেখে সবারই খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।’’
বস্তুত, দলগাঁও-বীরপাড়া রেল স্টেশনে ডলোমাইট ওঠানো নামানোর জেরে বীরপাড়ার চা বাগানগুলির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এলাকার চা বাগান কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, চা পাতার গুণমান মার খাচ্ছে গুঁড়ো ডলোমাইটের জন্য। বীরপাড়ার লঙ্কাপাড়া, সিংহানিয়া, দলমোড়, মাকড়াপাড়া, ঢেকলাপাড়া, বান্দাপানি-সহ কমবেশি ১৭টি চা বাগানের উপর ডলোমাইটের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে। চায়ের উপর ডলোমাইটের এই ক্ষতিকর প্রভাব খতিয়ে দেখতে ২০ অগস্ট ভারত-ভুটানের এক যৌথ প্রতিনিধি দল সরাসরি ডলোমাইটের খননস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের আগে ভুটানের ফুন্টশিলিংয়ে এক বৈঠকও করে ওই প্রতিনিধি দল। দলের সদস্যরা লক্ষ্য করেন, বাতাসে ডলোমাইট ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন ঝোরার মাধ্যমেও ভুটান থেকে ডলোমাইট এসে ঢুকছে চা বাগানে।
ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা টি বোর্ডের ডিরেক্টর (টি ডেভেলপমেন্ট) এস সুন্দররাজন বলেন, ‘‘এই পরিদর্শন সংক্রান্ত গোটা রিপোর্টটিই আমরা কেন্দ্রের কাছে জমা দেব।’’ চা বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘‘ডলোমাইট মেশা জল মাটির অম্লত্ব-ক্ষারত্ব মাত্রা (পিএইচ) অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনের তুলনায় এই পিএইচের মাত্রা বাড়লে চায়ের উৎপাদনের উপরেও প্রভাব পড়ে। চা মালিকদের সংগঠন ডিবিআইটিএ-র সম্পাদক সুমন্ত গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘পরিদর্শনে গিয়ে আমরা দেখেছি বীরপাড়ার মাকড়াপাড়া চা বাগানটির চা আবাদিযুক্ত গোটা অংশটিই ডলোমাইটের কবলে চলে গিয়েছে। এ ছাড়া কমবেশি বীরপাড়ার সবকটি চা বাগানেই ডলোমাইটের প্রভাব রয়েছে।’’
বীরপাড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্য, চায়ের উপর ভিত্তি করেই এলাকার অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। সেখানে চায়ের উপর ডলোমাইটের মারাত্মক প্রভাব এলাকার অর্থনীতিতে অবধি প্রভাব ফেলতে পারে বলে বাসিন্দাদের দাবি। কখনও বাতাসে মিশে আবার কখনও বৃষ্টির জলে ধুয়ে ডলোমাইট ছড়িয়ে পড়ছে চা বাগানে। তাঁদের দাবি, প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে তা রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ করা। মাদারিহাট-বীরপাড়ার বিডিও তন্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘‘দু’দেশই যে বিষয়টি নিয়ে ভাবছে তা পরিদর্শনের বিষয়টি থেকেই স্পষ্ট। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের তরফে কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে।’’