মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিতে উদয়ন গুহ এবং পার্থপ্রতিম রায়। —নিজস্ব চিত্র।
দিনহাটার দিন বদলে গিয়ে উদয়নের ‘উদয়’ ঘটেছে মঙ্গলবার। সেই উদয়ন গুহই বুধবার পৌঁছে গেলেন কোচবিহারের মদনমোহন এবং শিবযজ্ঞ মন্দিরে পুজো দিতে। অকপটে জানিয়ে দিলেন, তাঁকে ওই দুই মন্দিরে পুজো দিতে মঙ্গলবারই নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে কোচবিহার সফরে গিয়ে এই মদনমোহন মন্দির এবং শিবযজ্ঞ মন্দিরে পুজো দিয়েছেন মমতাও। পুজো দেওয়ার পর উদয়নের বার্তা, ‘‘বাংলার মানুষ, কোচবিহার জেলার মানুষ ভাল থাকুক। কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তি যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। ঠাকুরের কাছে সেই প্রার্থনাই করেছি।’’
মঙ্গলবার উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার দিনহাটা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির এবং শিবযজ্ঞ মন্দিরে পৌঁছন উদয়ন। সেখানে পুজো দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এ রাজ্য গোটা দেশকে দিশা দেখাক।’’ এক সময় হেরে যাওয়া আসনে বিপুল ভোটে জিতে বিধানসভায় প্রবেশের ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছেন উদয়ন। সেই সমীকরণের জোরে তিনি কি মন্ত্রিত্ব আদায় করে নিতে পারবেন? তাঁর দাবি, ‘‘আমি কখনও দাবি করতে পারি না যে মন্ত্রী হব। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে অন্য কারও কথা বলার অধিকার নেই। আর এ নিয়ে কথা বলার মতো ছেলেমানুষি করা যায় না।’’
দিনহাটার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে উদয়ন বলেন, ‘‘করার ইচ্ছা অনেক কিছু। স্কাই ইজ দ্য লিমিট। কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারি দেখি।’’ এর পরই তাঁর সংযোজন, ‘‘পুজো দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কালীঘাট থেকেই উনি বলেছেন মদনমোহন মন্দিরে এবং শিবযজ্ঞ মন্দিরে পুজো দিতে।’’ ঘটনাচক্রে কোচবিহার সফরে ওই দুই মন্দিরে পুজো দেন মমতাও। প্রসঙ্গত, শিবযজ্ঞ মন্দিরে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করেছে রাজ্য। আবার মদনমোহন মন্দিরের দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড রাজ্যের আওতায়। একই সঙ্গে কোচবিহারের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে ওই দুই মন্দির। নিজের জেলার ওই দুই ঐতিহ্যকে ছুঁয়ে জনপ্রতিনিধি হিসাবে উদয়নকে যাত্রা শুরু করার বার্তা দিয়েছেন দলনেত্রী। যাঁর বাসস্থান কালীঘাটের মতো রাজ্যের এক ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের কাছাকাছি।
গত বছর শিবযজ্ঞ মন্দিরে পুজো দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্দিরের উন্নয়নে এক কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। ফাইল ছবি
বুধবার উদয়নের এই সফরে আগাগোড়া সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলার প্রাক্তন সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়। ঠিক তাঁকে যেমন দেখা গিয়েছিল উদয়নের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণার পর থেকে ফলপ্রকাশ পর্যন্ত। এক সময়ে ৫৭ ভোটে হেরে যাওয়া দিনহাটায় জন সমর্থনের শিখরে তৃণমূল। ওই কেন্দ্রে উদয়ন জিতেছেন এক লক্ষ ৬৪ হাজারের বেশি ভোটে। কোচবিহারের জোড়াফুল শিবিরের অন্দরের খবর, দিনহাটায় উদয়নকে প্রার্থী করার পর থেকেই ওই কেন্দ্র দখল করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল তৃণমূল। কোচবিহারের জোড়াফুল শিবিরের একাংশের দাবি, নেতারা তো বটেই, উদয়নকে প্রার্থী করার পর থেকে দলের সমস্ত ‘ফাটল’ মুছে দিয়ে কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন সকলেই। উদয়নের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে তাঁর সঙ্গে দলের জেলা সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ, প্রাক্তন জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের উপস্থিতি সেই সংহতির বার্তাই দিয়েছিল বলে মনে করছেন অনেকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারের ৯টি আসনের মধ্যে সাতটি দখল করেছিল বিজেপি। মাত্র দু’টি পেয়েছিল তৃণমূল। সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছে দিনহাটায় উদয়নের বিপুল উত্থান।