জলবন্দি শহর, বাড়ছে বিপদ

বিভিন্ন নদীর জল বাড়লেও এখনও বিপদসীমার নীচে রয়েছে৷ নদী লাগোয়া ওয়ার্ডগুলিতে জল জমে। ক্ষয়ক্ষতির খবর আসেনি। প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকা। শহরের কংগ্রেস পাড়া, মহামায়া পাড়া, অশোক নগর, নিউটাউন পাড়া, নেতাজি পাড়া, স্টেশন রোড-সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৩
Share:

জলবন্দি: আলিপুরদুয়ারের বিদ্যাসাগর পল্লিতে। ছবি: নারায়ণ দে।

টানা বৃষ্টির শহর

Advertisement

এক নাগাড়ে বৃষ্টি অব্যাহত শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িতে৷ শুক্রবার দুই পুরসভার বেশ কিছু এলাকায় জমে যায়। বুধবার রাত থেকে মুশল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল দুই শহরে৷ বৃহস্পতিবার দিনে খানিকটা কম থাকলেও রাতের বেলায় ফের শুরু হয় বৃষ্টি৷ এদিন কমবেশি দিনভর বৃষ্টি চলেছে। সন্ধ্যার পর তা কিছুটা বাড়ে। বিভিন্ন নদীর জল বাড়লেও এখনও বিপদসীমার নীচে রয়েছে৷ নদী লাগোয়া ওয়ার্ডগুলিতে জল জমে। ক্ষয়ক্ষতির খবর আসেনি। প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকা। শহরের কংগ্রেস পাড়া, মহামায়া পাড়া, অশোক নগর, নিউটাউন পাড়া, নেতাজি পাড়া, স্টেশন রোড-সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। কংগ্রেস পাড়া এলাকায় বেশ কিছু বাড়িতে ইতিমধ্যেই জল ঢুকে পড়েছে। এ দিন দিনভর জলপাইগুড়িতে বৃষ্টি চলে। সন্ধের পর খানিকক্ষণে জন্য বৃষ্টি থামলেও তারপর থেকে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। পুরকর্মীরা সব ওয়ার্ডেই নজর রাখছেন বলে জানান জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু। টানা বৃষ্টিতে একটি ছোট সেতু ধসে গিয়ে নকশালবাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল তরাইয়ের পাহাড়গুমিয়া চা বাগানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও। একই সমস্যায় পড়েছে অটল চা বাগানের একাংশও। বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির পর সকালে বাগানের সঙ্গে নকশালবাড়ির যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সেতুটি ধসে যায়। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি সেতুটির মাঝের কালভার্টটি পুরোপুরি বসে গিয়েছে। এতে বাগানের সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক পরিবার বিপাকে। দ্রুত সেতু মেরামতের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

শহর জলমগ্ন

Advertisement

শুক্রবার আলিপুরদুয়ার শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জলবন্দি হয়েছেন বহু বাসিন্দা। তড়িঘড়ি ত্রাণ হিসবে খিচুড়ির ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান আশিস দত্ত জানান, ২০টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার বাসিন্দা জলবন্দি। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিধানপল্লি, বিদ্যাসাগর পল্লি এলাকায় নদীর চরে জল বাড়ায় বাসিন্দারা বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন। শহরে পাঁচটি জায়গায় নৌকা নামানো হয়েছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দনগর দ্বীপচর প্রমোদ নগর সহ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ নেতাজিনগর এক হাঁটু জল দাঁড়িয়েছে। শহরের জল বার হচ্ছে না। উল্টে নদীর জলস্তর বেড়েই চলেছে। আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা জানান, কালচিনি ব্লকের দলসিংপাড়া, মেন্দাবাড়ি সেন্ট্রাল ডুয়ার্স, কুমারগ্রামের তুরতুরি, আলিপুরদুয়ার ১ ও ২ ব্লক এবং ফালাকাটার বহু মানুষ জলবন্দি। দুর্গতদের জন্য ত্রাণ বিলির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বন্ধ ফেরিঘাট

কোচবিহারের সব ফেরিঘাট বন্ধের নির্দেশ দিল প্রশাসন। তোর্সা, রায়ডাক, মানসাই, তিস্তা সহ সব নদীতেই জল বিপদসীমার কাছ দিয়ে বইতে থাকে। রায়ডাকে লাল ও তোর্সায় হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়। এই অবস্থায় ফেরিঘাটে বন্ধ না হলে বড় কোনও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সেদিকে ভেবেই জেলা প্রশাসন ফেরিঘাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

রেকর্ড বৃষ্টি ও জল

গত ৪৮ ঘণ্টার বৃষ্টি কোচবিহারে কয়েক বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। তুফানগঞ্জে ৪৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোচবিহার সদরে ২৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিনহাটা, মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জেও ব্যাপক বৃষ্টি হয়। ফলে কোচবিহার শহর তো বটেই বাকি পাঁচ মহকুমার সবগুলি শহর জলের তলায় চলে যায়। তুফানগঞ্জে একটি ওয়ার্ডে নৌকা নামাতে হয়। গত ২৪ ঘন্টায় আলিপুরদুয়ারে ১৩২.৮০ মিমি হাসিমারা ১৭৬ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। কালজানিতে লাল ও সংকোশ নদীতে হলুদ সংকেত জারি করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে বানারহাটে সবচেয়ে বেশি ১৬৫ মিমি বৃষ্টি হয়েছে৷ এ ছাড়া ১৩৭.৫, জলপাইগুড়িতে ৭৭.৬ ও ময়নাগুড়িতে ৬৫ মিমি বৃষ্টি হয়৷

খুলল ত্রাণ শিবির

কোচবিহার জেলায় টানা বৃষ্টির জেরে নদীর জল বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাড়িঘরের ক্ষতি ছাড়াও আনাজ ও ধানের খেত ভেসে গিয়েছে। একাধিক পুকুর ভেসে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষিরা।

এ দিন দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। রায়ডাক নদীতে জারি করা হয় লাল সতর্কতা। তোর্সা, মানসাই নদীতে হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়। ইতিমধ্যেই দিনহাটা, তুফানগঞ্জের নদী সংলগ্ন এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। নদীর কাছ থেকে বাসিন্দাদের সরাতে ভুটভুটি ও স্পিড বোট তৈরি রাখা হয়েছে। তেমন পরিস্থিতি হলে উদ্ধার কাজে নামবে বিএসএফ। কোচবিহারে পুরসভার বিরোধী দলনেতা মহানন্দা সাহার ঘরের ভিতরে হাঁটু জল। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং দিনহাটা রাজ্য সড়কেও বেশ কিছু জায়গায় হাঁটু জলের স্রোত বইতে থাকে। কিছু ক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচলও চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ভুটান জল ছাড়ায় তোর্সা, রায়ডাক, মানসাই, কালজানি, তিস্তা নদীতে জল বাড়তে থাকে। ঘুঘুমারি, গীতালদহ, টাকাগাছ, ওকরাবাড়ি কিছু এলাকায় রাতে বসিন্দারা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেন। সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “কোথায় কী ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement