জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার গ্রামেগঞ্জে এবং বনাঞ্চলে পাওয়া যায় একরকম ফল। সেই ফল কেউই খায়না। স্থানীয় নাম কানাইডাঙা। কেউ কেউ ফলটিকে সুরিমারা বলেও ডাকে। দেখতে চ্যাপ্টা এবং লম্বা। এই শুকনো ফল মাঝখান দিয়ে কেটে দুটি অংশ এবং তার বিচি দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। এবারে পাতকাটা কলোনি অগ্রণী সঙ্ঘ পাঠাগারের নিবেদন মহিশূরের চামুন্ডেশ্বরী বা দুর্গার মন্দিরের অনুকরণে কানাইডাঙা ফল দিয়ে তৈরি মণ্ডপ।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে মহিষাসুরের নাম অনুসারে মহিশূরের নাম হয়। মহিশূর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে চামুণ্ডা পাহাড়ের ওপর যুদ্ধে দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন বলে কথিত। চামুণ্ডা পাহাড়ের ওপর ১১ শতকে রাজা বিষ্ণুবর্ধন প্রথম পাহাড়ের মাথায় একটি মন্দির তৈরি করেন। তারপরে ষোলো শতকে বিজয়নগর রাজবংশের রাজারা মন্দিরের উপরের অংশটি তৈরি করেন। পরবর্তীকালে ১৮২৭ সালে মহিশূর রাজবংশের রাজা কৃষ্ণরাজা উডেয়ার মন্দিরটির আধুনিকরূপ দান করেন।
চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরের এই আধুনিক রূপটিকে নিয়ে পাতকাটার পুজোর মণ্ডপ তৈরি করছেন কোচবিহার জেলার পাতলাখাওয়া এলাকার বাসিন্দা একসময়ের হস্তশিল্পী লক্ষ্মণ বর্মন। কুড়ি বছর আগে পাড়ার একটি পুজো সাজসজ্জার পরিকল্পনা করে তার কাজ শুরু। এবছর তিনি দুটি মণ্ডপ বানাচ্ছেন একটি জলপাইগুড়ির পাতকাটা কলোনির অন্যটি কোচবিহারের খাগরাবাড়ির।
প্রধান স্থপতি লক্ষ্মণ বলেন, “মণ্ডপটি তৈরি করতে মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার ফল ব্যবহার করা হচ্ছে।” সম্পূর্ণ মণ্ডপটি এই ফলের খোসা দিয়ে তৈরি। কাঠের ফ্রেম করে ফলের একটি করে অংশ বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মন্ডপটি চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরের মত সোনালি রংএর এবং ৭০ ফুট উঁচু এবং ৪০ ফুট চওড়া হবে।
ওপরে পাঁচটি ধাপ হবে। প্রতিটি ধাপের দুপাশে দেবদেবীর মূর্তি বসানো হবে। এই মূর্তিগুলি থার্মোকল কেটে তার ওপর ফলের খোষা বসিয়ে তৈরি হচ্ছে। ওপরে গদা নিয়ে অসুরের দুটি মূর্তিও থাকবে। ভেতরে ব্যবহৃত ফলগুলি পালিশ করে দেওয়া হচ্ছে। ভেতরে কিছুটা অংশে ঝিনুকের কাজ থাকবে। শিলিগুড়ির কুমারটুলি থেকে প্রতিমা আসবে।