ডাকবাংলো চত্বরের ভিতরে এমনই মদের বোতল পড়ে থাকে যত্রতত্র। —নিজস্ব চিত্র
নেতা-মন্ত্রীরা এলে বিশ্রাম নেওয়া বা ঘরোয়া বৈঠকের জন্য তৈরি হয়েছিল বাংলো। ধূপগুড়িতে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের অধীন সেই পরিদর্শন বাংলোই এখন হয়ে উঠেছে সমাজবিরোধীদের আখড়া। এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকায় তৈরি হয়েছে আতঙ্কের পরিবেশ। এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। ছেদ পড়েনি অসামাজিক কাজকর্মে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ জানার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
বাম জমানায় ধূপগুড়ি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তৈরি হেয়ছিল এই পরিদর্শন বাংলো। এলাকাবাসীর কাছে যা ডাকবাংলো নামেই বেশি পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক সময় যা ছিল তাঁদের গর্বের, সেই ডাকবাংলোর জন্যই কার্যত অতিষ্ঠ তাঁরা। সন্ধে হলেই ওই বাংলো চলে যায় সমাজবিরোধীদের দখলে। নিত্য দিন বসে মদ-জুয়ার আসর। মাঝে মধ্যেই বাংলোয় অপরিচিত মহিলাদের আনাগোনাও এলাকার পরিচিত দৃশ্য। সন্ধের পর ওই চত্বর দিয়ে যাতায়াত করতে হয় ভয়ে ভয়ে।
বাংলোর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত কেমন? বাংলো লাগোয়া বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মূল ফটক দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই খোলা। কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। নেই সিসিটিভির বন্দোবস্তও। পর্যাপ্ত আলোর অভাবে গোটা বাংলো চত্বর ডুবে যায় অন্ধকারে। ফলে সন্ধের পর দুষ্কৃতী, সমাজবিরোধীদের জন্য কার্যত মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে এই বাংলোর ভিতরের এলাকা।
আরও পড়ুন: নীলবাড়ি দখলে কোনও নিরীক্ষা নয়, পরীক্ষিত সৈনিকেই ভরসা মোদী-শাহর
করোনা পরিস্থিতির আগে এই বাংলো বিয়ে, অন্নপ্রাশন বা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য় ভাড়া দেওয়া হত। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ। নেওয়া হচ্ছে না বুকিংও। আর সেই সুযোগ নিয়েছে দুষ্কৃতী, সমাজবিরোধীরা। বাংলো চত্বরে মদের বোতল, গ্লাস— এ সব পড়ে থাকাটা এখন পরিচিত দৃশ্য়। এমনকি, মহিলাদের অন্তর্বাসও পড়ে থাকতে দেখেছেন এলাকাবাসী।
এলাকার বাসিন্দা হিমাদ্রি সাহা বলেন, "চোখের সামনে বাংলো তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থা আগে কখনও দেখিনি। জেলা পরিষদের এই ডাকবাংলোর সুনাম ছিলো এক সময়। বর্তমানে রাতের অন্ধকারে অসামাজিক কাজকর্ম চলে। এর আগে বাংলোর কেয়ারটেকার আমায় ডেকে দেখিয়েছে মদের বোতল, মহিলাদের অন্তর্বাস পড়ে রয়েছে। আমরা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব যাতে বাংলোর ভেতরে অসামাজিক কাজ কর্ম বন্ধ হয়।’’
আরও পড়ুন: ‘এই দল আর আমার নয়’, জল্পনা বাড়ালেন তৃণমূল বিধায়ক মিহির
জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত কুমার রায় আবার তোপ দেগেছেন তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘ধূপগুড়ি ইন্সপেকশন বাংলোর কথা বলার মতো নয়। সমাজবিরোধীদের অস্তানায় পরিণত হয়েছে গোটা চত্বর। আধিকারিকরা সব জেনেও চুপ করে রয়েছেন। তাঁরা দলদাসে পরিণত হয়েছেন। আমি জেলাশাসকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরব।’’
জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দুলাল দেবনাথ বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। একজন কর্মী ওখানে ছিল। লকডাউনের সময় তাঁকে জলপাইগুড়ির অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। বাংলোর ভিতরে অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধের ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, বেশ কিছু দিন আগে বাংলো চত্বরের ভিতরে একটি গাছের মধ্যে গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন এক ব্যবসায়ী। একাধিক বার চুরির ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, লকডাউনের আগে কখনও-সখনও বাংলোয় পুলিশ অভিযান চালাত। সেই সময় অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ ছিল। কিন্তু লকডাউনের সময় থেকে আর পুলিশকে এই চত্বরে দেখা যায় না। ফলে বেড়ে গিয়েছে সমাজ বিরোধীদের আনাগোনা, বেড়েছে অসামাজিক কার্যকলাপ। এখন জেলা পরিষদ আর পুলিশ-প্রশাসনের দিকেই তাকিয়ে এলাকাবাসী।