মানিকচকের হুকুমতটোলা গ্রামে গিয়ে অসুস্থদের দেখছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
পুরাতন মালদহের পর এবার ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছড়লো মানিকচক ও ইংরেজবাজার ব্লকে। ওই দুই ব্লকে মোট ১১ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এরমধ্যে ন’জনই মানিকচকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হুকুমতটোলা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের দেহে ফ্যালসিফেরাম জীবাণু মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া ইংরেজবাজার ব্লকের শোভানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর ও মাদিয়া গ্রামেও দু’জন আক্রান্ত রয়েছেন। এই দু’জনের রক্তেও ফ্যালসিফেরাম জীবাণু মিলেছে।
আক্রান্তদের মধ্যে আটজন মিলকি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকিদের চিকিৎসা চলছে বাড়িতেই। জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ১১ জনই শ্রমিকই মোবাইল টাওয়ারের কাজ করতে কেউ ওড়িশা ও কেউ মুম্বই গিয়েছিলেন। সেখানেই জ্বরে আক্রান্ত হন ও পরে বাড়ি ফিরে আসেন।
একই গ্রামে ন’জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নড়েচড়ে বসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। মেডিকেল টিম পাঠিয়ে ওই হুকুমতটোলা গ্রামের আক্রান্তদের পরিবারের সকলেরই রক্ত পরীক্ষা হয়। পাশাপাশি ওই গ্রামের ৪৮ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এদিন সকালেই ওই গ্রামে ছুটে যান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল। আক্রান্তদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
বুধবার একটি মেডিকেল টিম পুরাতন মালদহের কোর্ট স্টেশন এলাকাতেও পাঠানো হয়। ওই এলাকারই বাসিন্দা ক্ষীতীশ দাস রবিবার সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ওই মেডিকেল টিমটি এলাকায় আর কারও জ্বর হয়েছে কি না সে ব্যাপারে খোঁজ নেয়। পাশাপাশি এলাকা থেকে বেশ কিছু মানুষের রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করে।
এদিকে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করতে এ দিন মালদহের আইএমএ হলঘরে জেলার সমস্ত নার্সিংহোমগুলিকে নিয়ে বৈঠক করে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু অধিকাংশ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল বলে জানা গিয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপবাবু বলেন, ‘‘যারা উপস্থিত ছিল তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ডেঙ্গুর রক্তের পরীক্ষা ম্যাক এলাইজা পদ্ধতিতেই করলে সেই রিপোর্ট সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাবে। তিনি অভিযোগ করেন, জেলার দু-তিনটি নার্সিংহোম বাদ দিলে অন্যগুলি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোনও রোগী ভর্তি হচ্ছে কি না সেই তথ্য জানাচ্ছে না।
এ দিন মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রতীপকুমার কুণ্ডু বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনও রোগীর রক্তে নতুন করে ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি। কয়েকদিন আগে ভর্তি হওয়া দু’জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীরই চিকিৎসা চলছে।
ডেঙ্গি রুখতে শিলিগুড়ি পুর এলাকার ২৩ নম্বর ওয়ার্ড, খালপাড়া এলাকা এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির বাহক মশার লার্ভা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্য দফতর। শিলিগুড়ির জোনাল ম্যালেরিয়া বিভাগকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং মহকুমা পরিষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে বৈঠক করেন দার্জিলিং মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস। বিভিন্ন হাসপাতাল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির আশেপাশে ৫০ মিটার এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। কোথাও যাতে জল জমে না থাকে তা নজরদারির নির্দেশ দেন।