কালীবাড়ি রোডে জমা জল। — নিজস্ব চিত্র
আনন্দময়ী কালীবাড়ি রোড, লাগোয়া ডিআই ফান্ড বাজারে অন্তত ৩০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ব্যবসায়ী বাসিন্দাদের দাবি। ওই রাস্তার একটি ওষুধের দোকানের মালিক তমাল সরকার এবং দোকানের ৪ কর্মীরই ডেঙ্গি হয়েছিল। গালামালের দোকানি রাজেন পোদ্দার এবং তাঁর ছেলে নন্দনবাবু ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শিলিগুড়ি ভুটিয়া মার্কেটের কাছে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গি নিয়ে ভর্তি রয়েছেন কালীবাড়ির পুরোহিত পার্থ চৌধুরী। বাজারের দুটি সোনার দোকান এবং একটি কাপড়ের দোকানের মালিক, কর্মী মিলিয়ে আরও পাঁচ জনের ডেঙ্গি হয়েছিল। কয়েকদিন আগে সুস্থ হয়ে তাঁরা নার্সিংহোম থেকে বাড়িতে এসেছেন। ফলওয়ালাদের মধ্যে কয়েকজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। বস্তুত, ডিআই ফান্ড বাজার, আনন্দময়ী কালীবড়ি রোড়, মেয়রের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডাঙিপাড়া, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি, ঝঙ্কারমোড়ের মতো এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ে বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন।
মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নার্সিংহোমগুলিতে অনেকেই জ্বর নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই এনএসওয়ান পজিটিভ। কিন্তু ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় পজিটিভি না হলে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেঙ্গি আক্রান্ত বলা হচ্ছে না। তাতে বুঝতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ডেঙ্গি সন্দেহে চিকিৎসকেরা যাঁদের দেখছেন তাঁদের সত্যি ডেঙ্গি কি না, তা স্বাস্থ্য দফতরকেই দেখতে হবে।’’ এ দিন স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন মেয়র। তাঁর দাবি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সম্প্রতি ডেঙ্গি হলেও এখন তেমন নেই। পুরসভার তরফে শহরে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা প্রচারের জন্য আরও এক লক্ষ লিফলেট বিলি করা হবে। ২২-২৬ অক্টোবর পুর কর্মীরা বাড়ি বাডি় গিয়ে জ্বরের রোগী কত তা সমীক্ষা করেছেন। রিপোর্ট এলে সেই মতো ব্যবস্থা নেবেন।
উৎপল সাহা, শুক্লা পোদ্দার, তমাল সরকারদের মতো কালীবাড়ি রোড় এবং ডিআই ফান্ড বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজার এবং লাগোয়া এলাকার নিকাশি নালাগুলি বছরের পর বছর পরিষ্কার হয় না। জল দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক জায়গায় আবর্জনা জমে থাকলেও নিয়মিত সাফাই হয় না। মশার উপদ্রব রয়েইছে। দুর্গন্ধে ডিআই ফান্ড, মুড়িহাটি বাজারের অনেক জায়গায় বসে কারবার করাই দায়। বাজারের অনেকে ব্যবসায়ী, দোকানের কর্মীদের ডেঙ্গি হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ওই এলাকা চার নম্বর বরোর অধীনে পড়ে। বরো চেয়ারম্যান অসীম সাহা বলেন, ‘‘এলাকার কাউন্সিলর বরো কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি তোলেন। তার আগে থেকেই আমরা এলাকা সাফসুতরো রাখতে নজর দিয়েছি। ডেঙ্গি হচ্ছে জানতে পেরে সেখানে সাফাইয়ের জন্য বিশেষ অভিযানও হয়। ধোঁয়া ছড়ানো, তেল স্প্রে করা হচ্ছে নিয়মিত।’’
ডাঙিপাড়ার বাসিন্দা সুকুমার দাস জানান, তাঁর স্ত্রী সীমাদেবী, ছেলের বউ জয়শ্রীদেবী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। এনএসওয়ান পজিটিভ। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। দু’দিন ধরে তার ভাইপো জ্বরে ভুগছেন। রবিবার তাঁকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জ্বরে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দা অঞ্জলি পাল। অপর জন মহম্মদ জারুল হক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে নার্সিংহোমে ৬ দিন ভর্তি ছিলেন। তাঁরও এনএসওয়ান পজিটিভ। প্লেটলেট কমে ২০ হাজারে নেমে গিয়েছিল। পাঁচ ইউনিট প্লেটলেট দিতে হয় বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।