ছবি: সংগৃহীত
মালদহে ইংরেজবাজারে ফি-বছর বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ— স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট।
প্রশাসনিক হিসেব বলছে, আগের দু’বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। বিরোধীদের অভিযোগ, ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভা সময়ে পদক্ষেপ না করায় পরিস্থিতি গত বছরে জটিল হয়েছে। নিকাশি নালা ও জঞ্জাল নিয়মিত সাফাই না করার অভিযোগও তুলেছেন শহরবাসীর একাংশ। তাঁদের একাংশের নালিশ, শহরের অনেক প্রান্তে আবর্জনা জমে থাকায় ডেঙ্গির দাপট বেড়েছে।
শহরে ডেঙ্গির এই বাড়বাড়ন্তকে আসন্ন পুরভোটে তৃণমূল পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে প্রচারে আনচে চায় বিরোধী দলগুলি। তবে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার তরফে মশা মারার তেল, কামান দাগা, নিকাশি নালায় গাপ্পি মাছ ছাড়া, বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করা হচ্ছে।
মালদহের জেলা সদর ইংরেজবাজারে ২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে প্রতিটি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এতে বাসিন্দারা উদ্বেগে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৫ জন, ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ১৬৪ ও ২০১৯ সালে ১৯৫ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে সেই সংখ্যা অনেকটাই বেশি।
ডেঙ্গির এই বাড়বাড়ন্তে বাসিন্দাদের একাংশ পুরসভার উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রেবতী কর্মকার বলেন, ‘‘শহরের নিকাশি ব্যবস্থা একেবারেই বেহাল। নালায় জল জমে থাকছে। আর সেই নালা ডেঙ্গির মশার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে।’’
সামনেই পুরসভা ভোট। তার আগে ডেঙ্গি নিয়ে শহরের তৃণমূল পুরবোর্ডকে বিঁধতে প্রস্তুত বিরোধী দলগুলি। জেলা বিজেপি সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরোপুরি ব্যর্থ এই পুরবোর্ড। শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে। তা রুখতে যে ধরণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল, পুরসভা করেনি। তাতেই ডেঙ্গি আতঙ্ক শহরে ছড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পুজোর সময়েও ঘরে ঘরে জ্বর ও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছিলেন অনেকে।’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম বলেন, ‘‘এই পুরবোর্ড ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থ। মশা মারতে তেল স্প্রে বা কামান দাগা নিয়মিত করা হয় না। জঞ্জাল ও নিকাশি নালাও নিয়মিত সাফাই হয় না। তাতেই ডেঙ্গির মশার উপদ্রব বাড়ছে।’’
তৃণমূলের পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘আগে কী হয়েছে বলতে পারব না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধে সচেতনতা প্রচার জোরদার হয়েছে। বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা চলছে।’’ তাঁর আো দাবি, কোনও বাড়িতে জ্বরে কেউ আক্রান্ত রয়েছেন কি না, সে ক্ষেত্রে তাঁর চিকিৎসা কেমন চলছে, হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার কি না, বাড়িতে জল জমে থাকার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ১৫ দিন পর পর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশা মারতে কামান দাগা ও তেল স্প্রে করা হচ্ছে। পুকুরে ও নিকাশি নালায় মশার লার্ভা মারতে গাপ্পি মাছও ছাড়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বিরোধীরা ডেঙ্গি নিয়ে অপপ্রচার করছে।’’