(বাঁ দিকে) ডেঙ্গি আক্রান্ত অসুস্থ কিশোর। (ডান দিকে) ওই এলাকায় জলাজমির হাল এমনই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শিলিগুড়ি শহরেও ডেঙ্গির সংক্রমণ ঘটছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী গত তিন সপ্তাহে শহরের বাসিন্দা ৪ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। তবে তাঁরা সম্প্রতি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তার চেয়েও স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের কারণ ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে শহরের সর্বত্র।
যে চার জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে তাদের বাড়ির আশেপাশে নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানতে পেরেছে স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা জলেই ডেঙ্গির জীবাণুর বাহক মশার বংশবিস্তার রোগ সংক্রমণের কারণ বলে মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং চিকিৎসকদের অনেকে। বুধবার দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতর পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এবং রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে বৈঠক করে। কোথায় কোথায় নির্মাণ কাজ হচ্ছে তার ‘ম্যাপ’ এক সপ্তাহের মধ্যে পুরসভার কাছে চেয়ে পাঠিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। তা পেলেই ওই সমস্ত এলাকা ঘুরে স্বাস্থ্য দফতরের টিম কোথাও জমে থাকা জলে মশার লার্ভা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে ।
বছর তিনেক আগে ডেঙ্গির সংক্রমণে ১১ জন মারা গিয়েছিল শিলিগুড়িতে। গত দু’বছরেও ডেঙ্গির প্রকোপ কম বেশি রয়েছে। এ বছর জুলাই মাস থেকেই ডেঙ্গির সংক্রমণ ঘটছে। তার পরেও পুর কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য দফতরের উদাসীনতা রয়েছে বলে বাসিন্দাদের অনেকে মনে করছেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ১২৮ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘তার মধ্যে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ৪ জনের এবং পাহাড়ে এক জনের শরীরে ডেঙ্গি মিলেছে। তবে তাঁরা সুস্থ হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়ানোর পর আমরা এখানেও আগাম সতর্ক হতে চাই।’’ ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের আশা কর্মী এবং পুরসভার স্বাস্থ্য কর্মীদের দিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার ২৩, ৩৩, ৪১ এবং ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের যে চার বাসিন্দার শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে তাদের মধ্যে দু’জনের বয়স ১২ এবং ১৬। বাকী দু’জন মধ্য বয়স্ক। ডেঙ্গি নির্ণয়ে এলাইজা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নার্সিংহোমগুলিতে চিকিৎসাধীন জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনাও পাঠাতে বলা হয়েছে সেখানে।
এ দিন বৈঠকে উপস্থিত শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, শহরে ৮০ টির কাছাকাছি নার্সিংহোম রয়েছে। তাদের অর্ধেকের মতো রিপোর্ট পাঠান। বাকিরা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সমস্ত নার্সিংহোমগুলিকেই ডেঙ্গি নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। এমনকী ডেঙ্গি রোগী না থাকলেও বাধ্যতামূলক ভাবে তা রিপোর্ট হিসাবে জানাতে বলা হয়েছে।
মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোথাও নির্মাণ কাজের জায়গায় যাতে জল জমে না থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হবে। শহরের স্কুলগুলিতে শীঘ্রই পুরসভার দল গিয়ে খতিয়ে দেখবে কোথাও জল জমে রয়েছে কি না। শহরের যে সব এলাকায় ডেঙ্গির রোগী মিলেছে তার চারপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে পুরসভার কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন।’’