আবর্জনার ভ্যাট উল্টে দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভরত মহিলা সাফাই কর্মীরা (ডানদিকে)। বুধবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিনোদ দাস।
রাস্তায় ভ্যাট উল্টে দিয়ে তুমুল বিক্ষোভ। সমস্ত আবর্জনা দিনভর পড়ে থাকল শিলিগুড়ির প্রধান রাস্তাগুলিতে। সাফাই কর্মচারীদের অনির্দিষ্ট কালের কর্মবিরতির প্রথম দিনে অভূতপূর্ব বিক্ষোভের জেরে চরম নাজেহাল হতে হল শহরবাসীকে। বাড়ি বাড়ি থেকে সংগৃহীত হল না কোনও আবর্জনা। আন্দোলনের এই ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জনপ্রতিনিধিরাও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গোটা শহর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, ভাতা বৃদ্ধি, চিকিৎসার খরচ-সহ দশ দফা দাবিতে বুধবার থেকে এই কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে উত্তরবঙ্গ সাফাই কর্মচারী সমিতি। এ দিন সকালে বাঘাযতীন পার্কের সামনে জড়ো হন কয়েকশো সাফাই কর্মী। বিক্ষোভ চলাকালীন ওই এলাকার সমস্ত ভ্যাট রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে আবর্জনা চারিদিকে ছড়িয়ে দেন। এর পর ৯টা নাগাদ পুরনিগমের সামনে হাজির হন তাঁরা। পুরনিগমের গেটের সামনে আবর্জনা ফেলে সেই গেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে কোর্ট মোড় ও কাছারি রোডে গিয়েও একই কাণ্ড করেন সাফাই কর্মীরা। পুলিশ এসেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি।
উত্তরবঙ্গ সাফাই কর্মচারী সমিতির সভাপতি কিরণ রাউতের কথা, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য আন্দোলন করছি। পুরনিগমে গিয়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। লাভ হয়নি কিছু। কাজে গেলে কর্মীরা কোনও বাবে জখম হলে তাঁর চিকিৎসার কোনও খরচ দেওয়া হয় না। করোনার সময় কাজ করলেও বর্ধিত ভাতা এখনও পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই এই কর্মবিরতি।’’ তবে দাবি-দাওয়া থাকলেও এমন আন্দোলনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী। ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি রঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘সাফাই কর্মীদের এই দাবির পক্ষে আমরাও রয়েছি। কিন্তু এ ভাবে আন্দোলন হয় না। আলোচনায় বসে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নামতে হবে। ’’
তবে এই আন্দোলনের পিছনে বিজেপির মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিলিগুড়ি পুর প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এমন ধরনের আন্দোলন বিজেপি করাতে পারে। ভোট আসছে বলে সাফাই কর্মীদের দিয়ে এসব করানো হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়ন ও পুরসভা কীভাবে চালাতে হয়, বিজেপি নেতারা জানেন না। তাঁরা শুধু ধর্মের নামে রাজনীতি করেন।’’
এ নিয়ে বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠিক জেলা সভাপতি প্রবীণ আগরওয়াল বলেন, ‘‘আসলে বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কেউ কিছু করতে পারেনি এই সাফাই কর্মীদের জন্য। তাই এখন বিজেপিকে দোষারোপ করছে। আর এটা তো নায্য দাবি। আমরা সাফাই কর্মীদের দাবির সঙ্গে আছি।’’ কর্মীদের দাবিদাওয়া নিয়ে অশোক বলেন, অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ করবে রাজ্য সরকার। আর করোনার সময় থেকে রাজ্যের তরফে পুরনিগমকে বাড়তি কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। পুরনিগমের সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নের এই বিষয়গুলি জানা রয়েছে।’’