বস্তাবন্দি: জায়গা মেলেনি হিমঘরে। বাড়ি সংলগ্ন মাঠেই বস্তায় ভরে রাখা রয়েছে আলু। পুরাতন মালদহে। সোমবার। ছবি: স্বরূপ সাহা।
আলুসেদ্ধ আর ভাত— এই খেয়েই সকালে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিজয় সিংহ। বছরভর এমনই মেনু তাঁর। সোমবার সকালে রিকশা থামিয়ে শহরের রথবাড়ি বাজারে গিয়ে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে ফিরে আসেন তিনি। কেন? তিনি বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে পাতে এখন আলুসেদ্ধটুকুও জুটবে না। মালদহেও আলু কেজিতে ২৫ টাকা ছুঁয়ে ফেলেছে। ব্যবসায়ীদের সাফ জবাব, আলুর দাম নাকি আরও বাড়বে।’’ আলুর দাম আকাশ ছোঁয়া হলে খাব কি? প্রশ্ন করে ফাঁকা রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন বিজয়।
সত্যিই তো, সপ্তাহ খানেক আগেও জেলার বাজারে আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি ১৮ থেকে ২০ টাকা। এখন সেই আলুই বাজারে বিকোচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে। শোনা যাচ্ছে, দাম নাকি আরও বাড়বে। মালদহের প্রশাসনিক ভবনের সামনেই সুফল বাংলার স্টল রয়েছে। সেখানেও আলু কেজি প্রতি ২১ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক কর্মী বলেন, ‘‘গত সপ্তাহেই ১৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছি। এখন সেই আলুই ২১ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। কেন আলুর দাম বাড়ছে, তা আমরা বলতে পারব না।’’
আমের জেলা হলেও আলু উৎপাদনেও পিছিয়ে নেই মালদহ। জেলায় প্রায় ১৫৩ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। আর উৎপাদন হয় গড়ে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন। এ বারও গত বারের তুলনায় ২ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি জেলায় আলু উৎপাদন হয়েছে। জেলায় পর্যাপ্ত হিমঘর নেই। হিমঘরে ঠাঁই না হওয়ায় বাড়ির উঠোন, মাঠেই পচে আলু নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরাদের একাংশ।
‘দামি’ আলু
• আলু চাষ হয়েছে জেলার ১৫৩ হেক্টর জমিতে
• উৎপাদন হয়েছে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন
দাম (প্রতি কেজি)
• খুচরো বাজার ২৫-২৬ টাকা
• সুফল বাংলা স্টল ২১ টাকা
• পাইকারি বাজার ২১ টাকা
কেন দামি
• বর্ধমানে এ বারে আলুর উৎপাদন কম হয়েছে
• মালদহ থেকে বর্ধমানে আলু গিয়েছে
• বর্ধমানের হিমঘর থেকেই আবার জেলায় আলু আসছে
• মালদহের হিমঘর গুলিতে ফড়েদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ
• চাষিদের একাংশের আলু মাঠেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে
পুরাতন মালদহ, গাজলের বহু গ্রামেই এখন আলু পচার গন্ধে বাতাস ভারী হচ্ছে বলে অভিযোগ। আলু চাষি পিন্টু রাজবংশী বলেন, ‘‘আলুর বন্ড নিয়ে জেলায় অনেক কালোবাজারি হয়েছে। ফড়েরা বন্ড কিনে আলু হিমঘরে রেখেছে। আর আমাদের মতো চাষিরা জায়গা পাইনি। চাষিদের আলু মাঠে, ঘরে পচে নষ্ট হচ্ছে।’’
তার পরেও আলুর দাম জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগ, আলু মজুত করে কৃত্রিম ভাবে সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে। তার উপরে প্রশাসনের নজরদারিও নেই বলে অভিযোগ। আলুর দামে রাশ টানতে এখন থেকেই বাজারে নজরদারির দাবি তুলেছেন সাধারণ মানুষ।
মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (বিপণন) শম্পা হাজরা বলেন, ‘‘বাজারে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’