মাত্র ১৬৩৪ ভোটের ব্যবধানে লোকসভা ভোটে তাঁর হারের ধাক্কা এখনও টাটকা। তার উপর কল্যাণীতে এইমস-ধাঁচের হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা করে কেন্দ্র তাঁর দীর্ঘদিনের আন্দোলনে জল ঢেলে দিয়েছে। তাই নিজের খাসতালুক কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুরকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চান না কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি।। এই পুরভোটকে দীপার ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ লড়াই হিসেবে দেখছেন তাঁর অনুগামীদের অনেকেই।
কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে দিল্লি থেকে ইতিমধ্যেই এক দফায় দুটি এলাকায় গিয়ে কর্মিসভা করেছেন দীপা। আবার এপ্রিলের গোড়ায় টানা সাত দিন থেকে প্রচার-সভা করবেন। দীপার কথায়, “রাজ্য চালাতে গিয়ে যা অবস্থা, তাতে পুরবোর্ড হাতে পেলে এলাকার পরিষেবা শিকেয় তুলে দেবে তৃণমূল।’’ তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘দুটি পুরসভাই ফের দখলে রাখব।”
লড়াইটা অবশ্য সোজা হবে না। গত লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, ওই দুটি পুরসভায় বিজেপি ভাল ভোট পেয়েছিল। ইসলামপুরে ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডে বিজেপি সকলকে টপকে প্রথম স্থানে ছিল। কেবল দু’টি ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রথম জায়গা পেয়েছিল। তুলনায় কালিয়াগঞ্জে ১৭টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৩টিতে, দু’টিতে বিজেপি ও দু’টিতে বামেরা এগিয়ে ছিল।
তবে কংগ্রেসের উত্তর দিনাজপুর জেলার সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের দাবি, পুরভোটে পরিস্থিতি অন্যরকম। লোকসভা ভোটের পরে দীপা খোলাখুলিই জানিয়ে দিয়েছিলেন, একদিকে মোদী-হাওয়া, অন্য দিকে দেওর সত্যরঞ্জন দাশমুন্সি তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ানোয় কংগ্রেসের ভোটে টান পড়ে। মোহিতবাবুর দাবি, পুরভোট হয় স্থানীয় পরিষেবার ভিত্তিতে। রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিতবাবু বললেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে কালিয়াগঞ্জ, ইসলামপুরে যে ভাবে পরিষেবা দিচ্ছি তা সকলেই দেখছেন। বোঝেনও। কাজেই ওই দুটো বোর্ড ফের পাব।”
কিন্তু, লড়াইটা যে কঠিন হবে সেটা মানছেন কালিয়াগঞ্জ পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা কালিয়াগঞ্জ শহর কংগ্রেস সভাপতি অরুণ দে সরকার। তিনি বলেন, “প্রিয়বাবু সুস্থ থাকলে আর দীপাদেবী সাংসদ থাকলে পুরসভা নির্বাচনের লড়াইটা দলের পক্ষে সহজ হত।” বিজেপির ইসলামপুর টাউনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিত্ সেন অবশ্য দাবি করছেন, “মানুষ পুরসভাতেও পরিবর্তন চাইছে। লোকসভার পরিসংখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে আমরা অন্তত ৯টি আসন পাব।”
রায়গঞ্জে ভোট নেই। কিন্তু, বিরোধী পক্ষের যাবতীয় আয়োজনকে উপেক্ষা করে দীপা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কি না সেটাই এখন রায়গঞ্জের আলোচ্য বিষয়।