নিজস্ব চিত্র
পুজোর মরসুমে গ্লেনারিজ়ে আপাতত দার্জিলিং-চা বিক্রি বন্ধ। শুধু নিজের রেস্তরাঁতেই নয়, চা-শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে গ্লেনারিজ়-মালিক অন্যদের কাছেও দার্জিলিং-চা বন্ধের আর্জি জানিয়েছিলেন। শৈলশহরের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ওই রেস্তরাঁর ১১০ বছরের ইতিহাসে এমনটা প্রথম। ফলে দার্জিলিং ঘুরতে আসা পর্যটকদের অনেকেই হতাশ। কিন্তু পাহাড়ের অন্যত্র আগের মতোই দিব্য দার্জিলিং-চা বিক্রি হচ্ছে। ‘দস্তুর’ মেনে শনিবার ম্যালে বসেও চা পান করতে দেখা গেল পর্যটকদের।
গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ের চা বাগানে শ্রমিকদের ২০ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হয় পুজোর সময়। কিন্ত এ বার চা বাগানের মালিকদের একাংশ বোনাসের টাকা একেবারে দিতে না হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। গ্লেনারিজ়ের মালিক অজয় এডওয়ার্ড। তিনি হামরো পার্টির কর্ণধারও। এই পরিস্থিতিতে অজয় সিদ্ধান্ত নেন, শ্রমিকদের উপর অন্যায়ের প্রতিবাদে তাঁর রেস্তরাঁয় দার্জিলিং-চা মিলবে না।
অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন, অজয়ের সিদ্ধান্তে বিশেষ প্রভাব পড়বে না দার্জিলিঙে। বাস্তবেও তা-ই ঘটেছে। শুক্রের পর শনিবারও দেদার চা-বিক্রির ছবি দেখা গিয়েছে ম্যাল চত্বরে। অজয়ের রেস্তরাঁর পাশেই আরও একটি জনপ্রিয় রেস্তরাঁ রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেখানে বেশি ভিড় চোখে পড়েছে সকাল থেকে। দার্জিলিঙে ঘুরতে যাওয়া হাওড়ার বাসিন্দা অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘দার্জিলিঙে বেড়াতে এসে দার্জিলিং-চা খাব না! এটা কী করে হয়? চা বাগানের মালিক আর শ্রমিকদের মধ্যে সারা বছরই সমস্যা লেগে থাকে। বয়কট কখনওই তার সমাধান নয়।’’ এই নিয়ে চার বার সপরিবার শৈলশহরে বেড়াতে এসেছেন মহারাষ্ট্রের সুরেশ পট্টনায়েক। যত বারই এসেছেন, তত বারই ব্যাগ ভর্তি করে চা বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী সমস্যা, আমি সত্যিই জানি না। কিন্তু বয়কট কেন? এখানে এসে দার্জিলিং-চা না পেলে সত্যিই হতাশ হতে হত।’’
দিন তিনেকের জন্য দার্জিলিং ঘুরতে গিয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা অঙ্কিতা দেবরায়। তিনি বলেন, ‘‘দার্জিলিঙে এলে গ্লেনারিজ়ে চা খেতেই হয়। কিন্তু সব সময় তো আর গ্লেনারিজ়ে খাওয়া সম্ভব নয়। অনেক দাম ওখানে। বেশির ভাগ সময় তো ম্যালে বসেই আমরা চা খাই। গ্লেনারিজ়ে যা দাম, ওই টাকায় বাইরে ১০ কাপ চা পাওয়া যাবে। তাই ওখানে চা বিক্রি বন্ধ হল কি না, তাতে গোটা দার্জিলিঙে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।’’
অন্য চা-বিক্রেতারাও অজয়ের আবেদনে সাড়া দিতে রাজি নন। ছোট বিক্রেতাদের অনেকের বক্তব্য, রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেই তাঁদের পেট চালাতে হয়। তাই, পুজোর আগে চা বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। শহরের বহু পুরনো চা ব্যবসায়ী বিমল প্রধান বলেন, ‘‘চা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। শ্রমিকদেরও অনেক দাবি রয়েছে। তবে বয়কটের সিদ্ধান্তকে আমি সমর্থন করি না। বহু পর্যটক আসেন। চা কিনে নিয়ে যান। তাঁদের কেন নিরাশ করব? এতে দার্জিলিঙের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।’’