পুরভোটে সিপিআই

নেতাদের জন্য বিপর্যয়, দাবি কর্মীদের

দু’টি পুরভোটে পরপর একটি আসনও জিততে না পারায় দার্জিলিং জেলা সিপিআই নেতাদের একাংশের ভূমিকা নিয়েই দলে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। দলীয় সূত্রের খবর, নিজেদের নির্দিষ্ট আসনে বছর ভর জন সংযোগের অভাব, সঠিকভাবে প্রার্থী চয়ন না করা নিয়েও দলের কিছু নেতা তো বটেই, বামফ্রন্টের অন্য শরিকেরাও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০২:২৯
Share:

দু’টি পুরভোটে পরপর একটি আসনও জিততে না পারায় দার্জিলিং জেলা সিপিআই নেতাদের একাংশের ভূমিকা নিয়েই দলে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। দলীয় সূত্রের খবর, নিজেদের নির্দিষ্ট আসনে বছর ভর জন সংযোগের অভাব, সঠিকভাবে প্রার্থী চয়ন না করা নিয়েও দলের কিছু নেতা তো বটেই, বামফ্রন্টের অন্য শরিকেরাও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। ফ্রন্টের অন্দরের ভোটের এই ফলাফল নিয়ে আলোচনার দাবিও উঠেছে। ২০০৯ এবং ২০১৫ সালে পরপর শিলিগুড়ি পুরসভার চারটি আসনে লড়েও সিপিআই একটি আসনও জিততে পারেনি।

Advertisement

এ বার ভোটে সিপিএম একাই ২১টি আসন জিতেছে। ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি-ও একটি করে আসন জিতেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সংখ্যা থেকে ১টি কম, মোট ২৩ আসন জিতেছে বামেরা। সেখানে সিপিএমের পর শরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৪টি আসন পেয়ে একটি আসন না জেতায় সিপিআই নেতারা ফ্রন্টের মধ্যেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন। দলের কয়েকজন নেতা জানান, মূলত জেলার কিছু নেতা সংগঠন ঠিকঠাক তৈরি করতে পারেননি বলেই শহরে দলের এই অবস্থা হয়েছে। ওই নেতারা দলের ভাঙনও ঠেকাতে পারেননি। তা ছাড়া, দলে নতুন মুখ না আসায় অনেক ‘পুরানো’ মুখ দিয়েই দল চালাতে হচ্ছে। তার মধ্যে আবার অনেকেই বয়সের ভারে কাবু হয়ে পড়েছেন। সেখানে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে থেকেও ফরওয়ার্ড ব্লক বা আরএসপি অনেকটাই ভাল অবস্থায় রয়েছে। সিপিআই নেতারা অবশেয খোলাখুলি ভাবেই এতদিনে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়া ছাড়াও কয়েকটি ওয়ার্ড বদলের দাবির প্রসঙ্গও তুলেছেন।

জেলা বামফ্রন্টের আহ্বূায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওঁরা এবার ভোটে ওয়ার্ড কিছু বদল করতে চেয়েছিলেন, তবে ফ্রন্টের আলোচনায় এ বারে তা সম্ভব হয়নি। আর বাকিটা তো সিপিআই-র দলীয় বিষয়।’’

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, দলের জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী বাম আমলে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ডেপুটি মেয়রও ছিলেন। গতবার ওই আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় উজ্জ্বলবাবুর স্ত্রী সেখান থেকে দাঁড়িযে হেরে যান। এবার ফ্রন্টের তরফে উজ্জ্বলবাবুকে ওই ওয়ার্ডে দাঁড়াতে বলা হলেও তিনি ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াতে চান বলে জানিয়েছিলেন। সিপিএমের আসন হলেও ওই এলাকায় উজ্জ্বলবাবুদের অল্পবিস্তর সংগঠনও রয়েছে। কিন্তু ফ্রন্টের বৈঠকে আসন আর পাল্টানো না হওয়ায় তিনি আর দাঁড়াননি।

১৫ নম্বর ছাড়া, ৪০, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও দল প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে ৪০ নম্বরে প্রাক্তন মেয়র পারিষদ অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার দাঁড় করানো হয়। ১২ নম্বরের নেতা তথা দলের আরেক প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র হরিসাধন ঘোষ দল ছেড়ে দেওয়ায় সেখানেও ব্যাঙ্ককর্মী আন্দোলনের নেতা লক্ষ্মী মাহাতোকে শেষ মুহুর্তে দাঁড় করানো হয়। একই ভাবে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দলের পুরানো নেতা রমন তুলি টিকিট পান।

দলের কয়েকজন নেতা জানান, একটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডেই পুরানো মুখের উপরেই ভরসা করতে হয়েছে। তাতে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করা যায়নি। আবার দুই দফায় কোনও ওয়ার্ড জিততে না পারায় সেখানে সংগঠনও তলানিতে গিয়েছে। আবার বছরভর ওয়ার্ডগুলিতে তেমন কোনও কাজও করা হয়নি।

জেলা সম্পাদক উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘আমাদের বরাদ্দ ওয়ার্ডগুলিতে মানুষের পাশে সব সময় থাকা নিয়ে ব্যর্থতা তো রয়েছেই। দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি।’’ তিনি জানান, এবার ভোটের আগে ফ্রন্টের বৈঠকে আমাদের অন্তত একটি ওয়ার্ড বদলের কথা বলেছিলাম। কিন্তু ফ্রন্টের কয়েকটি আলোচনায় তা হয়নি। আগামীদিনে দেখা যাক কী দাঁড়ায়।

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে নতুন করে চেষ্টা শুরু করেছেন সিপিআই নেতারা। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় জমি অধিগ্রহণ বিলের প্রতিবাদ করে মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড় থেকে মিছিল করবে দল। তার পরে আদালতে চত্বরে আইন অমান্যও হবে। উজ্জ্বলবাবু জানান, কেন্দ্র জমি নিয়ে যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে কৃষক স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement