দলীয় সভায় যোগ দেওয়ায় সিপিএম কর্মীদের উপর হামলার চেষ্টা করেছে তৃণমূল। এমন অভিযোগ তুলে তাঁকে পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে দাবি করলেন নাটাবাড়ির সিপিএম প্রার্থী তমসের আলি। তমসেরের অভিযোগ, লিখিত ভাবে এগারোটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিল পুলিশ। তিনি এসডিপিও ফারুক মহম্মদ চৌধুরী বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, তমসের সিপিএম কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তদন্তে এমন কোনও বিষয় উঠে আসছে না। গোটা গ্রামে কেউই হামলা হয়েছে বলে জানাচ্ছে না। এমনকী, উনি যাঁদের কথা বলছেন তাঁরাও হামলার অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য ভিডিও রেকর্ডিং করেছে পুলিশ।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “ওই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তাঁর অঙ্গ হিসেবেই কিছু প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু উত্তর তিনি দিয়েছেন। আমরা তা নির্বাচন কমিশনে জানিয়ে দেব।” তুফানগঞ্জের এসডিপিও বলেন, “আমি নিজে ওই গ্রামে গিয়েছি। তমসের আলি সেই সময় ছিলেন। ওই দিন হামলা হয়েছে বলে একজনও জানায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি তাঁর কাছেই জানতে চাওয়া হয়েছে।” তমসেরের অভিযোগ, পুলিশ সঠিক ভাবে তদন্ত করেনি। ঘটনা যেখানে হয়েছে সেখানে না গিয়ে অন্যত্র গিয়েছে। পরে তাঁর উপস্থিতিতে পুলিশ সেখানে গেলেও জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাসিন্দাদের ধমক দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাসিন্দারা ভয়ে আছেন। তাঁরা অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না। তাই আমি অভিযোগ করেছি। আর আমাকেই মিথ্যে অভিযোগের কথা বলে এগারো দফা প্রশ্ন জানতে চাওয়া হল। বিষয়টি কমিশনে জানাব। এটা হয়রানি ছাড়া কিছুই নয়।”
তমসের আলি নাটাবাড়ি কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। গত বিধানসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রেই রবিবাবু তমসেরকে ভোটে হারিয়েছিলেন। এ বারে দু’পক্ষই ময়দানে নেমে ভোটে প্রচার শুরু করেছে। তমসের শুরু থেকেই অভিযোগ করছেন, বাম কর্মী-সমর্থকদের প্রচারে বাধা দিচ্ছে শাসক দল তৃণমূল। দিন কয়েক আগে গারোপাড়ায় দলের এক সভায় যোগ দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের এক কর্মীকে মারধরও করে তৃণমূল কর্মীরা। কেউ যাতে বামেদের মিছিলে না যায় সে জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত ১৭ মার্চ নাটবাড়িতে তাঁর একটি সভা ছিল। ওই এলাকার বাসিন্দা বাম সমর্থকরা প্রকাশ্যে বের হতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাঁর দাবি, ওইদিন ভয় উপেক্ষা করেই অনেকেই সভায় যোগ দেন। তার পরেই, ১৮ মার্চ সকালে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ইমদাদুল হক, সহিদুল হক ওই গ্রামে সিপিএম কর্মীদের উপরে হামলার চেষ্টা করে। বাসিন্দারা রুখে দাঁড়ালে তাঁরা ফিরে যায়। ওইদিনই তমসের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ওই দু’জনের নেতৃত্বে চল্লিশ পঞ্চাশ জনের একটি দল গ্রামের বাম কর্মীদের উপরে হামলা করে। তিনি সমাধানের মাধ্যমে কমিশনেও অভিযোগ জানান। পুলিশ সেখানে তদন্তে গিয়ে হামলার কোনও প্রমাণ বা অভিযোগ কিছুই পায়নি বলে জানিয়েছে।
তমসেরের দাবি, “শাসক দলের হয়ে কাজ করছে পুলিশের একটি অংশ। তাই সঠিক ভাবে ঘটনার তদন্ত করা হয়নি। উল্টে আমার কাছেই জবাব চাওয়া হয়।” তৃণমূল তমসেরবাবুর ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি তথা নাটাবাড়ির প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। আসলে যেখানে যাচ্ছে মানুষের দেখা পাচ্ছেন না। কেউ তাঁর কথা শুনতে চাইছেন না। তাই তাঁরা হতাশ হয়ে এমন অভিযোগ তুলছেন।”