বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার ব্রিগেড শুধু নয়, বুথ স্তরে ব্রিগেড তৈরি করতে না পারলে বামেরা ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না বলেই বামদলগুলির নেতারা মনে করছেন। রবিবার ব্রিগেড ভরলেও কি আগামী দিনে কি লোকসভায় ভোটবাক্স ভরবে? ব্রিগেডের পরে, এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বাম নেতৃত্বের মনে। আর সেখানে রয়েছে সংশয়ও। এক সময়ের তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার ‘শিলিগুড়ি মডেল’-এর জনক, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী থেকে মেয়রের পদে থাকা অশোক ভট্টাচার্যের মতো প্রবীণ বাম নেতাও মনে করছেন, আসল লড়াই নিচু স্তরের সংগঠনে। অশোকবাবুরা মানছেন, ব্রিগেড ‘আশার আলো’ দেখালেও বুথ স্তরে ব্রিগেড বা কর্মী সমাবেশ করে সংগঠন না দাঁড় করাতে পারলে ‘স্বপ্ন’ অধরাই থাকবে।
রাজ্যের বাম আমলের প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর কথায়, ‘‘মীনাক্ষীরা (ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়) যা করছে, তা এক কথায় অসাধারণ। বামপন্থীরা বিপ্লব আনে। কিন্তু সে জন্য মানুষের সমর্থন পেতে সংগঠন দরকার হবেই। এ রাজ্যে তা অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। বুথ স্তর থেকে বামপন্থীদের নতুন করে তৈরি করতেই হবে।’’
শারীরিক সমস্যা এবং চোখের সমস্যার জন্য শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র এ বার কলকাতায় ব্রিগেডে যাননি। আগের থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও অনেকটা কমিয়েছেন। বাড়িতে নিজের স্টাডি রুমে পড়াশোনা, লেখালেখি করেই সময় কাটান। ফোনে অবশ্য বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রাখেন। তিনি বললেন, ‘‘টিভিতে ব্রিগেড দেখেছি। নবীন প্রজন্মের এরা কী ভাল ভাবে সভা করল! বক্তারা পরিষ্কার করে মতামত তুলে ধরেছেন। তবে মানুষের সমাগম থেকে আত্মতুষ্টির জায়গা রাখা ঠিক নয়। ২০১১, ২০২১ বিভিন্ন সময়ে বামেদের সভায় ভিড় উপচে পড়েছে। কিন্তু ব্যালট বাক্স ভরেনি। তবে বামপন্থা একটা সমাজ বিজ্ঞান। মানুষকে নিজেদের ভাবনা, বিচারকে বোঝাতে পারলে অবশ্যই যথাযথ প্রয়োগ হবে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বামেরা আশাবাদী হলেও, ঝুলিতে কিছুই ঢোকেনি। ‘বামের ভোট রামে’ গিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে চাউর হয়ে যায়। তৃণমূলকে ঠেকাতে বামেরা ময়দানে নামলেও, তাদের একটা বড় অংশের ভোট গেরুয়া শিবিরে চলে যায়। বিজেপি তৃণমূলকে ঠেকাতে পারবে ভেবে ২০১৯, ২০২১ সালে বামেদের ভোটের বড় অংশ বিজেপির ঘরে ঢোকে। যা প্রথমে না মানলেও, পরে বাম নেতারা মেনে নেন। সে ভোট ফেরানোর চেষ্টাও শুরু করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে তা সব সময় খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। ‘শিলিগুড়ি মডেল’ তৈরি করে অশোক ভট্টাচার্যেরা শিলিগুড়ি বিধানসভা, পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদ ক্ষমতায় রেখেছিলেন। তৃণমূল জমানায় রাজ্যের একমাত্র শহর, যেখানে বাম-বোর্ড কাজ করেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতিরও বদল হয়েছে।
শিলিগুড়িতে আর কোথাও ক্ষমতায় নেই বামেরা। সংগঠনও পাড়ায়-পাড়ায় দুর্বল হয়েছে। তবে রবিবারের ব্রিগেডে অনেকে শিলিগুড়ি থেকেও গিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছবির ভিড় বে়ড়েছে।
সেখানে প্রবীণ এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘ব্রিগেডে সবাই শুধু জড়ো হচ্ছি। ভাষণ হচ্ছে, ব্যস। আশার আলো দেখা যাচ্ছে। পাড়ায়-পাড়ায় জমায়েত করলে মার খেয়ে লড়াই করতে হতে পারে। সেখানে তাই লোক মিলছে না বেশি। এখানেই নজর দিতে হবে।’’