পরিচর্যা: আমবাড়ি-বেলাকোবার পথের একটি চা বাগানে। রবিবার। ছবি: স্বরূপ সরকার
বিধানসভায় বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর পর এ বার সিপিএম৷ দার্জিলিং জেলার পাহাড় ও সমতলের একাধিক চা বাগানের জমি চা পর্যটনের নাম করে বিল্ডার, প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ তুলল তারা। দলের দাবি, সম্প্রতি একটি তথ্য জানার অধিকারের (আরটিআই) রিপোর্ট সামনে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, জেলার ১১টি চা বাগান মিলিয়ে শতাধিক একর জমির লিজ় ফেরত নিয়ে চা পর্যটনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে তরাই এলাকার একটি চা বাগান কর্তৃপক্ষ ১৪৬ একর, আর একটি বাগান ৮০ একর জমিরআবেদন করেছেন। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় ৩০০ একরের বেশি চা বাগানের জমির হাত বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ।
বামেদের দাবি, চা পর্যটনের নাম করে সমস্ত জমি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। পাহাড়েও তাই চেষ্টা চলছে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চা বাগানের ভবিষ্যৎ এ জেলায় খুব ভাল বলে মনে হচ্ছে না। সর্বত্র বাগানের জমিতে ব্যবসায়ী, প্রোমোটারদের চোখ পড়েছে। ১১টি বাগানের বিপুল পরিমাণ জমি নিয়ে প্রোমোটিং বা জমির কারবারের আশঙ্কা থাকছে।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কিছুদিন আগে চম্পাসারি-দেবীডাঙা এলাকার এক বাসিন্দা দার্জিলিং প্রশাসনের কাছে তথ্য জানার অধিকারে চিঠি দেন। সেখানে তিনি জেলায় কোন বাগানে কত পরিমাণ জমি চা ব্যবসার বাইরে অন্য কাজে ব্যবহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে তা জানতে চান। জেলা প্রশাসনের নির্দিষ্ট বিভাগ থেকে তাঁকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে ১১টি বাগান কর্তৃপক্ষ এই আবেদন করেছেন। চা বাগানের লিজ় সরকার এ ক্ষেত্রে ফেরত নিয়ে তা চা পর্যটন বা অন্য কাজে দিতে পারে। এই ১১টি বাগানের জমির চা বাগান-সংক্রান্ত লিজ় তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে একটি বাগানে তারাখচিত চা পর্যটনের রিসর্ট হওয়ার পরেও আরও জমি চাওয়া হয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘এ জেলার চা বাগানের সুনামের দিন শেষ হতে চলছে। প্রোমোটার বা সিন্ডিকেট রাজ জমিকে সামনে রেখে বাগানে ঢুকে পড়ছে বলে আমরা আতঙ্কিত। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ এতে বিপন্ন হতে পারে।’’ যদিও শাসক তৃণমূলের অভিযোগ, অশোক ভট্টাচার্যের আমলেই চাঁদমণি চা বাগান তুলে চা পর্যটন নয়, একেবারে শিল্পগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘চা বাগানে আইন মেনেই চা পর্যটন হচ্ছে। সেখানে কোথায় প্রোমোটিং বা রিয়েল এস্টেটের কাজ হচ্ছে, তা দেখানো হোক।’’ তিনি জানান, চা বাগানকে অক্ষুন্ন রেখে ১৫ শতাংশ অব্যবহৃত জমিতে চা পর্যটনের কথা আইনে রয়েছে।