রায় শোনার পরে। নিজস্ব চিত্র
প্রায় চার বছর ধরে চলছিল একই পরিবারের ৩ সদস্যকে খুনের মামলা। বুধবারই দোষী সাব্যস্ত করা হয় তিন অভিযুক্তকে। শনিবার ওই তিন যুবক সহদেব বর্মণ, দিপু সূত্রধর এবং চিরঞ্জিৎ মোদককে ফাঁসির সাজা শোনালেন শিলিগুড়ি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক দেবপ্রসাদ নাথ। কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করার জন্য এক মাস সময় পাবে দোষীরা। শহরের আইনজীবীরা দাবি করেন, এর আগে এখানে কখনও ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়নি। তাঁদের দাবি, ঘটনাটিকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে মনে করছেন তাঁরা।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মাটিগাড়ার লেনিনপুরে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি প্রদীপ বর্ধন (৬১), তাঁর স্ত্রী দীপ্তি (৫০) এবং ছেলে প্রসেনজিৎকে (২৪) পরিকল্পনা করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। প্রথমে মামলাটি এসিজেএম আদালতে শুরু হলেও এক বছর পরে তা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের আদালতে আসে। শনিবার এডিজে আদালতের সরকারি আইনজীবী পীযূষকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘মামলায় মোট ২৮ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করেছে আদালত। আমরা দাবি করেছিলাম, এই ঘটনায় কড়া সাজা দেওয়া হোক দোষীদের। শিলিগুড়ি আদালতের এই রায় তাই সব দিক থেকে ঐতিহাসিক।’’ অভিযুক্তদের আইনজীবী চন্দন দে বলেন, ‘‘আমরা উচ্চতর আদালতে আবেদন করব।’’
আইনজীবী মহল জানিয়েছে, এই মামলার শুনানির সময়ে সাক্ষীদের বয়ান রেকর্ডের ক্ষেত্রে দিন নষ্ট করা হয়নি। তাই আদালত বদল হওয়া সত্ত্বেও চার বছরের মধ্যে রায় ঘোষণা সম্ভব হয়েছে।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তিন আসামীকে আদালতে আনা হয়। বেলা দেড়টা নাগাদ রায় দেন বিচারক। ঘোষণা শুনেই চুপ হয়ে যায় ওই তিন জন। কোর্ট লকআপ থেকে আদালতে তোলার সময় বা রায় ঘোষণার পরেও কোনও কথা বলতে চায়নি তারা। অভিযুক্তদের পরিবারের কেউ এদিন তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী চন্দনবাবু। সহদেব এবং দিপু মাটিগাড়ার তাড়িজোতের বাসিন্দা। চিরঞ্জিতের বাড়ি মালবাজারে। তিন জনই পেশায় কাঠের মিস্ত্রি।
শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সঙ্গে আদালতে এসেছিলেন ঘটনায় নিহত প্রদীপবাবুর বিবাহিত মেয়ে রেশমি সেন। রায় ঘোষণার পরে আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি। তদন্তকারী অফিসার নীতেশ লামাকে কৃতজ্ঞতাও জানান। রেশমি বলেন, ‘‘আমার বাবা, মা এবং ভাইকে যারা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আদালত যথাযথ রায় দিয়েছেন।’’