তৃণমূল থেকে সিপিএমে ফেরা।—নিজস্ব চিত্র
তিন বছরের মাথায় তৃণমূল ছেড়ে আবার নিজেদের পুরোনো দলে ফিরে এলেন চার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। রবিবার বিকেলে শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ির পূর্ব ধনতলা হাইস্কুলে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দিলীপ সিংহ, সিপিএমের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক দিবস চৌবের উপস্থিতিতে তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে দলে যোগ দেন। ফুলবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই সদস্য পূর্ব ধনতলার উত্তম সরকার, দ্রৌপদী সরকার এবং পশ্চিম ধনতলার অটল দাস ও দেবেশ মণ্ডল সিপিএমে ফের যোগ দেবেন, তা চাউর হতেই শনিবার তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা করে তৃণমূল। শাসক দলের তরফে তাঁদের বিরুদ্ধে জমি দুর্নীতির অভিযোগও তোলা হয়।
এ দিন নিজেদের পুরানো দলে যোগ দিয়েই পাল্টা তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন চার জন। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক ও ফুলবাড়ি অঞ্চল সভাপতি দিলীপ রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ওই দুই নেতা জমির কারবারে জড়িত। এরাই তৃণমূলকে এলাকায় শেষ করছে।’’ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতারা। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক দিবসবাবু বলেন, ‘‘এঁরা সিপিএমেই ছিলেন। ভয়, হুমকি দেখিয়ে জোর করে দল ভাঙানো হয়েছিল। তৃণমূলের স্বেচ্ছাচারিতায় তাঁরা দল ছাড়তে বাধ্য হলেন।’’
নতুন করে সিপিএমে যোগ দেওয়া তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যরা সিপিএমের টিকিটেই গত ২০১৩ সালে জেতেন। তাঁরা জানান, ভয় দেখিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। দেবেশ মণ্ডলের দাবি, ‘‘ভয়, হুমকি তো ছিলই। কারও জমি দখল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তৃণমূল। আমরা গোলমালে যেতে চাইনি। তাই বাধ্য হয়ে তৃণমূলে যোগ দিই।’’ উত্তম সরকারে দাবি, ‘‘সমস্ত সিদ্ধান্ত নেয় দেবাশিসবাবু ও দিলীপবাবু। কারও কথা শোনা হয় না। নানা দুর্নীতিতে এরাই জড়িত।। এটা দীর্ঘদিন মেনে নিতে না পারায় দল ছাড়লাম।’’ সিপিএম নেতারা জানান, পঞ্চায়েতের আরও কিছু সদস্য সিপিএমে যোগ দিতে যোগাযোগ করছেন।
তৃণমূল নেতা দেবাশিসবাবু দাবি, ‘‘ওই চার জনকেই দুর্নীতির অভিযোগে সতর্ক করা হয়েছিল। তা না মানায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।’’ তিনি জানান, জোড়াপানি, মহানন্দা নদীর চর দখল, সরকারি জমি দখল করার অনেকে অভিযোগ রয়েছে। এখন দল ছেড়ে আমাদের নামে মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে। এতে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না। আবার দিলীপবাবু দাবি, ‘‘‘অভিযোগ যে কেউ তুলতে পারেন। কিন্তু প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’ তবে জমি দখলের অভিযোগ থাকলেও সরকারি দল হিসাবে তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেননি বলে অবশ্য স্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘সতর্ক করা হয়েছিল। তাই তো দল থেকে বার করা হল।’’ উল্টে দলত্যাগীরা জানান, দুর্নীতি হলে সেচ, পূর্ত, পুলিশকে কোথাও কিছু জানানো হয়নি কেন তা তো তৃণমূল নেতারা বলতে পারছেন না।
এদিন ফুলবাড়ি-২ পঞ্চায়েতে সিপিএমের আসন সংখ্যা নতুন করে দাঁড়াল ৭। তৃণমূলের ১৩। ২০১৩-র নির্বাচনের ফলে ২০টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১০টি আসন পায়। বাকি ১০টির মধ্যে ৫টি কংগ্রেস ও পাঁচটি তৃণমূল পায়। পরে কংগ্রেসের ৫ জনই তৃণমূলে যোগ দেন। প্রধান, উপপ্রধান লটারির মাধ্যমে ঠিক হয়। লটারিতে প্রধান-উপপ্রধান সমস্ত পদই পায় সিপিএম। পরে সিপিএম থেকে দল ভাঙিয়ে আরও ৭ জনকে দলে টেনে নেয় তৃণমূল। শেষে তৃণমূলের ১৭টি ও সিপিএমের ৩টি আসন দাঁড়িয়েছিল।