মাস্ক পড়তে চান না অনেকে। — ফাইল চিত্র।
স্টেশন ভর্তি মানুষ। তার মধ্যে কয়েক জনকে পাওয়া গেল, যাঁদের মুখ ঢাকা মাস্কে। আবার মাস্ক পরলেন? জিজ্ঞেস করতেই উত্তর এল, ‘‘আবার করোনা ফিরছে যে!’’ এক জন বললেন, ‘‘আমি করোনা-বিধি শিথিল হওয়ার পরেও, মাস্ক ছাড়িনি।’’ আর অধিকাংশ, যাঁরা মাস্ক পরেননি, তাঁদের অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আবার কি মাস্ক পরতে হবে?’’ কেউ কেউ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ‘‘ছেড়েছি যখন, আর ধরব না।’’
নিউ কোচবিহার স্টেশন থেকে জেলার এমনই ছবি দেখা গেল শুক্রবার। দিন কয়েক থেকে আবার করোনা নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। চিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। দেশ ও রাজ্যের প্রধানেরা করোনা নিয়ে আবারও সচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন। আর তা নিয়েই মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কোচবিহার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয়ের উপরে আমাদের নজর রয়েছে। প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ মহকুমাশাসক (কোচবিহার সদর) রাকিবুর রহমান বলেন, ‘‘সচেতনতার বার্তা দেওয়া শুরু হয়েছে। নির্দেশ পেলেই মাস্ক নিয়ে প্রচার শুরু হবে।’’
গত বছর দুয়েক মাস্ক যেন মানুষের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। অনেকে পকেটেই রাখতেন স্যানিটাইজ়ার। গত কয়েক মাসে সে সব প্রায় সবই ভুলে যেতে শুরু করেছেন মানুষ। স্যানিটাইজ়ার হাতে এখন আর প্রায় কাউকেই ঘুরতে দেখা যায় না। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে কেউ মাস্ক পরে রয়েছেন, এমনটা খুঁজে পাওয়াও ভার হয়ে গিয়েছিল। দিন কয়েক থেকে আবারও করোনা নিয়ে নজরদারি শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশে করোনা আবার বাড়তে শুরু করেছে বলে চাউর হয়েছে। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, আবার কি ফিরছে মাস্ক, স্যানিটাইজার!
নিউ কোচবিহারে স্টেশনে মাস্ক পরে দাঁড়িয়েছিলেন এক যুবক অমিত দাস। তিনি নিউ কোচবিহার থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা যাবেন। বললেন, ‘‘শুনেছি, করোনা আবার বাড়তে শুরু করেছে। তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না। শুরু থেকেই সতর্ক থাকছি।’’ দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ নিরঞ্জন রায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মাস্ক ছাড়িনি। বাড়িতে থাকলে ব্যবহার করি না। কিন্তু বাইরে বেরোলে, মাস্ক আমার সঙ্গে থাকবেই। করোনার সঙ্গে ধুলোবালির হাত থেকেও রক্ষা করে মাস্ক।’’
কোচবিহার বাসস্ট্যান্ড থেকে এমজেএন পার্ক সর্বত্রই চোখে পড়ল এক-দুজন করে মাস্ক ব্যবহার করা মানুষ। বেশির ভাগই অবশ্য মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। টোটো চালক দুলাল রায় বলেন, ‘‘দুটো টিকা আগেই নিয়েছিলাম। এ বার বুস্টার নিলাম। আমার আর ভয় কোথায়! তাই মাস্ককে বিদায় দিয়েছি।’’ সাগর দিঘির পাড়ে সন্ধের আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন এক দল তরুণ। কারও মুখে মাস্ক ছিল না। ওঁদের এক জনের কথায়, ‘‘মাস্কের দিন শেষ। নতুন করে আর দরকার হবে না বলেই মনে করছি।’’