লকডাউনে চায়ের বাণিজ্যে ফের খারাপ খবর। দেশের সব প্রান্তেই নিলামে দর কমেছে চায়ের। এর মধ্যে দার্জিলিঙের অর্থোডক্স বড় পাতা যেমন রয়েছে, তেমনিই রয়েছে সিটিসি চা-ও। করোনা সংক্রমণে চায়ের ফ্লার্স্ট ফ্লাশের ক্ষতির তালিকা আগেই প্রকাশ করেছি দেশের সর্বোচ্চ চা নিয়ামক সংস্থা টি বোর্ড। লকডাউনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিলাম শুরু হয়েছে। টি বোর্ডের কাছে আসা হিসেবে চা-পাতার কেজি প্রতি গড় দাম কমেছে। উত্তর ভারতের চায়ের দাম কমেছে প্রায় ১৪ টাকা। এর সরাসরি প্রভাব সামগ্রিক ভাবে চা শিল্পে পড়বে বলে আশঙ্কা। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের মধ্যেও। লকডাউনে এমনিতেই বাগানগুলিতে পঞ্চাশ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে কাজ চলছে। যে শ্রমিক আগের মাসে ২৬ দিনের মজুরি পেতেন, তিনি ১২ দিনের বেশি মজুরি পাচ্ছেন না। বাজারে চায়ের দাম কমে যাওয়ায় বাগান কর্তৃপক্ষ খরচে কাটছাঁট করলে ভবিষ্যতে শ্রমিকদের পাওনা সুযোগ সুবিধেতেও কোপ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
টি বোর্ডের হিসেবে গত মার্চ মাস পর্যন্ত চায়ের উৎপাদনে গড়পরতা ৪৬ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। এ বার টি বোর্ড জানাল, গত বছর মার্চে নিলামে উত্তর ভারতের চা কেজি প্রতি ১১৫ টাকার বেশি দাম পেয়েছে। এ বছরের নিলামে সেই চায়ের দাম দাঁড়িয়েছে কেজি প্রতি ৯০ টাকা ৭৮ পয়সা। টি বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী, মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে চায়ের দাম কমেছে গড়ে কেজি প্রতি ১৩ টাকা। চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের অন্যতম সদস্য মণিকুমার ডার্নাল বলেন, “করোনার প্রভাব যে চায়ের বাজারে পড়ছে বা পড়বে, এটা স্বাভাবিক। এই লড়াই আমাদের সকলের। আমরা আগেই সরকারকে বলেছি, চা শ্রমিকদের বাঁচাতে পদক্ষেপ করা হোক। চা শ্রমিকদের হাতে নগদের অভাব হতে শুরু করেছে।”
চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চের দাবি, চা পাতার দাম কম মিলছে— এই যুক্তিতে বহু মালিক বাগানে কাজ বন্ধ করতে পারেন। তেমন হলে সরকারকে পদক্ষেপ করতে হবে, দাবি মঞ্চের। চা বাগান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ মঞ্চ কনসালটেটিভ কমিটি ফর প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তার বলেন, “চা বাণিজ্যে ঘনিয়ে আসা সঙ্কট কীভাবে কাটানো যায়, তা নিয়েই আপাতত ভাবছি। এই ক্ষতি বেশিদিন বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে ছোটরাও। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “আমরা তো নিজেরাই শ্রমিক, নিজেরাই পরিচালক। চা পাতার দাম ১ টাকা কমলেই আমাদের ধাক্কা আসে। সেখানে এত টাকা কমে গিয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত চা অর্থনীতি চাঙ্গা করতে প্যাকেজ ঘোষণা করা।”