বাজারে ভীড়। নিজস্ব চিত্র।
একে ঋতু বদল, তার উপরে করোনার হানা। ‘লকডাউন’ হওয়ার ফলে সকলে মিলে গৃহবন্দিও। চট করে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার উপায় নেই। তাই এখন কী করবেন, কী করবেন না— এই নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে রইল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ।
লকডাউন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে যাচ্ছেন অনেকেই। আমাদেরও যেতে হচ্ছে। বাজারে এবং গ্রামের দিকের হাটগুলোতে বেশ ভিড় হচ্ছে। বাজার করতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব ভূলে যাচ্ছেন অনেকে। তাতে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে। কী করণীয়?
—বিল্লোল সরকার, কোচবিহার
করোনা পরিস্থিতিতে এমন সমস্যা নিয়ে ভাবছেন সচেতন নাগরিকদের অনেকেই। তা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর কল্যাণ খান।
•প্রথমত মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাস- ১৯ নিজে থেকে চলাফেরা করতে পারে না। আমরা নিজেরাই তাকে ডেকে আনছি। আমাদের বেশিরভাগ লোকজনের ধারণা, ভাইরাস আমার কাছে এসে পড়বে। আসলে আমরাই সেটাকে সাহায্য করছি এক জনের থেকে আর এক জনের কাছে পৌঁছে দিতে। আর তার ফলেই আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। আমরা বলি, কাঁটা ফুটে গেল। কিন্তু কাঁটা তো নিজে থেকে এসে ফুটে যায় না। আমরা কাঁটাতে পা দিই বলেই সেটা ফোটে। ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেটা মনে রাখতে হবে।
• বাজারে আমরা যেতেই পারি। কিন্তু দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। তা না করলেই মনে রাখতে হবে, সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কাজ করছি। সংক্রমণ ছড়াতে আমরা দায়ী নই, অন্য কেউ দায়ী— এমন ভাবনা আমাদের মধ্যে কাজ করে। আসলে আমরাই দায়ী থাকব। তাই ক্রেতা এবং বিক্রেতা সকলকেই সেটা মাথায় রাখতে হবে।
• মাস্ক ব্যাবহার বাধ্যতামূলক। তাতে আমাদের থেকে যেমন সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে না, তেমনই অন্যের থেকে আমার সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। আবার মাস্ক পরেছি বলে অন্যের কাছে যেতে পারি তেমন ধারণাও যেন না হয়। দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। কারণ, কে জীবাণু বহন করছে আগে থেকে জানা বা বোঝা নাও যেতে পারে।
• মাস্কের ব্যবহার জানতে হবে। মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে অনেকে ঘুরছেন। যদি কোনও ভাবে মাস্কে ভাইরাস আসে তা হলে ভাবুন, কত সহজে গলা থেকে আমার শ্বাসের সঙ্গে আমার ভিতরে যেতে পারে। অনেকে নাকের নীচে মাস্ক পড়ছে। মাস্ক খোলা থাকছে। মাস্ক খোলার পরে হাত ধুতে হবে। কেন না মাস্কের মধ্যে যদি জীবাণু এসে থাকে তা হলে কোনও দোকানি মাস্ক হাত দিয়ে খুললেন, তার পরে জিনিসপত্র দিলেন বা টাকা ফেরত দিলেন। তাতে তাঁর হাত থেকে আমার কাছে জীবাণু আসতে পারে।
• আনাজ বিক্রেতারা যেন কাছাকাছি না বসেন। বেশ কিছু এলাকায় বাজারগুলোকে তাই ফাঁকা মাঠে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিক্রেতাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ, তাঁর কাছে অনেকে আসছেন। তাই দোকানের সামনে দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করতে হবে। প্রশাসনকেও বিষয়টি দেখতে হবে।
• অনেকক্ষণ ধরে বাজারে ঘোরা যাবে না। ১৫ মিনিট বাজারে থাকার বদলে এক ঘণ্টা থাকলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়বে। তাই আগে থেকে কী কী কিনবেন তার তালিকা করে নিন। সেই মতো বাজারে গিয়ে দ্রুত কিনে চলে আসতে হবে। এই নয় যে, বাজার করে পরিচিতদের সঙ্গে গল্প করে, আড্ডা দিয়ে, চা খেয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরবেন! এখন সে দিন নেই।