Coronavirus

এই বছর বন্ধ মদনমোহনের নৌকাবিহার

দেবোত্তর ট্রাস্ট  বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ৮ এপ্রিল, বুধবার ফি বছরের রীতি মেনে ওই অনুষ্ঠানের সূচি ছিল। প্রতিবারই বিশেষ তিথিতে শহরের সাগরদিঘি মদনমোহনের বিগ্রহ নৌকায় পরিক্রমা হয়।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

কলেরার পর করোনা। প্রায় একশো বছর আগের স্মৃতিই যেন ফিরল কোচবিহারের ঐতিহ্যের অনুষ্ঠানে। জমায়েত এড়াতে এবার সাগরদিঘিতে রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন দেবের নৌকা বিহার হচ্ছে না। পুরোহিতদের ‘বিধান’ নিয়ে সাগরদিঘি থেকে জল নিয়ে এসে নিয়মরক্ষার পুজো, অনুষ্ঠান অবশ্য সবটাই করা হবে মদনমোহন মন্দিরে।

Advertisement

দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ৮ এপ্রিল, বুধবার ফি বছরের রীতি মেনে ওই অনুষ্ঠানের সূচি ছিল। প্রতিবারই বিশেষ তিথিতে শহরের সাগরদিঘি মদনমোহনের বিগ্রহ নৌকায় পরিক্রমা হয়। যা দেখতে ভক্ত ও বাসিন্দাদের ব্যাপক জমায়েত হয়। এবার করোনা সতর্কতায় জমায়েত এড়াতে জোর দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দা, গবেষকদের দেবোত্তরের অনেকেই ওই সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি সঠিক বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।

ইতিহাস গবেষকদের একাংশ জানান, কলেরার জন্য ১৯২৩ সালে কোচবিহারে রাসমেলা বন্ধ রাখা হয়েছিল। মদনমোহন দেবের রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে ওই মেলা বসে। গবেষক নৃপেন পাল বলেন, “১৯২৩ সালে কলেরা মহামারীর আকার ধারণ করায় রাজ সরকারের আদেশে রাসমেলা বন্ধ রাখা হয়েছিল। এবারও নৌকাবিহার বন্ধে দেবোত্তর কর্তৃপক্ষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জমায়েত এড়াতে হবে।”

Advertisement

প্রাবন্ধিক দেবব্রত চাকি বলেন, “করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত একশো ভাগ সঠিক। মনে রাখতে হবে, কলেরার জন্য রাজ আমলের রাসমেলাও কিন্তু সেই সময় বাতিল করা হয়েছিল।”

দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেবোত্তরের তরফে বোর্ডের ‘দ্বার পণ্ডিতে’র সঙ্গেও আলোচনা করা হয়। মতামত নেওয়া হয় অন্য পুরোহিতদেরও। ওই আলোচনায় সাগরদিঘির জল তুলে এনে মদনমোহন মন্দিরে রীতি মেনে ওই পুজো ও অন্য অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিধানও দেওয়া হয়েছে। দেবোত্তর ট্রাস্ট্রের সভাপতি, কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান ওই প্রসঙ্গে বলেন, “ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করা হয়েছে।” বোর্ডের সদস্য, কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক সঞ্জয় পাল বলেন, “পুরোহিত, দ্বার পণ্ডিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নেওয়া হয়। আলোচনা হয়। জমায়েত এড়িয়ে বিধান অনুযায়ী নিয়ম মেনেই অনুষ্ঠান হচ্ছে।”

দেবোত্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি বছর প্রাচীন রীতি মেনে মন্দিরে দু’দিন ধরে কন্দর্প উৎসব হয়। প্রথম দিন ‘মদনকাম’ পুজো হয়। পরদিন সাগরদিঘিতে নৌকায় মদনমোহন বিগ্রহ পরিক্রমা করানো হয়। বিগ্রহে জল ছিটিয়ে শুদ্ধ করা হয়। কেন এমন রেওয়াজ? স্থানীয় প্রবাদ, মদনকাম পুজোয় মদনমোহন দেব নেশাচ্ছন্ন হয়ে আমিষ খেয়ে ফেলেন। বন্ধু দেবতারা তাই প্রায়শ্চিত্ত করতে সাগরদিঘির জলে স্নানের বিধান দেন। তার জেরে নৌকাবিহার করে মোটের জল দিয়ে প্রতীকী স্নান করানো হয় বিগ্রহ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement