Coronavirus

এটা আমার জীবনের দ্বিতীয় বিপর্যয়

লকডাউন ঘোষণার পর থেকে দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। যার ফলে রোজগারও এখন পুরোপুরি বন্ধ। হাতে যা টাকা ছিল, তা ফুরিয়ে আসছে। পাঁচ জনের সংসারে শুধু খাওয়া বাবদই কত খরচ!

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০০
Share:

কণিকা বর্মণ ফুচকা বিক্রেতা, মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা

করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথাও বলা হচ্ছে। বিপদ থেকে বাঁচতে তাই সরকারি নির্দেশ মেনে আমিও চার মেয়ে নিয়ে গত প্রায় এক সপ্তাহের উপর ঘরবন্দি। কিন্তু সঙ্গে তো দোকানটাও বন্ধ। তার উপরে পাঁচ জনের সংসার। এখন চিন্তা একটাই, এ ভাবে টানা দোকান বন্ধ থাকলে টাকা পাবো কোথায়? খাবারই বা জুটবে কোত্থেকে!

Advertisement

একটা সময়ে স্বামী প্রদীপ বর্মণ সারাদিন মেখলিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করতেন। রান্না, বাড়ির কাজকর্ম আর চার মেয়ের দোখাশোনা করেই দিন কাটত আমার। দিনের শেষে সকলে একসঙ্গে বসে কথাবার্তা বলতাম। সংসারের চাপ সে ভাবে কখনওই সামলাতে হয়নি। অভাব ছিল না, তা নয়. কিন্তু তা সত্ত্বেও মিলেমিশে জীবনটা ভালই কাটছিল। কিন্তু গত বছরের শেষে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় স্বামীর। বিপর্যয় নেমে আসে সংসারে। কী ভাবে সংসার চালাবো, কী ভাবে চার মেয়েকে খাওয়াবো, মানুষ করবো -সেই চিন্তাই মাথায় ঘুরতো সারাদিন।

কিন্তু ক’টা দিন কাটার পরে নিজেকে শক্ত করি। ঠিক করি, স্বামীর মতো ভ্যানে করে খাবার বিক্রি করব। এর পরে একটি স্কুলের সামনে সকাল থেকে ভ্যানে করে লুচি-তরকারি, ফুচকা বিক্রি শুরু করি। একজন মহিলা হয়ে ভ্যান ঠেলে দোকান করছি, প্রথম দিকে একটু অস্বস্তি হলেও আর কোনও উপায়ও ছিল না। সারাদিন দোকান চালিয়ে যা পাওয়া যেত, তা দিয়েই সংসার চলতো।

Advertisement

তা-ও তো চলছিল। কিন্তু, লকডাউন ঘোষণার পর থেকে দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। যার ফলে রোজগারও এখন পুরোপুরি বন্ধ। হাতে যা টাকা ছিল, তা ফুরিয়ে আসছে। পাঁচ জনের সংসারে শুধু খাওয়া বাবদই কত খরচ! কোত্থেকে টাকা পাই বলুন তো! চার মেয়ের মধ্যে বড় পূজা। এ বছর মাধ্যমিক দিয়েছে। তার পরে পায়েল, নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাই ওরা আর মিড-ডে মিল পায় না। ছোট দুই মেয়ে পপি সপ্তম শ্রেণিতে, পিঙ্কি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ওরা মিড-ডে মিলে কিছু চাল ও আলু পেয়েছে। এ ছাড়া এলাকার একটি সংস্থা চাল-ডাল-তেল দিয়ে সাহায্য করেছে। কোনও ভাবে খাওয়া জুটছে। কিন্তু এ ভাবে কতদিন চলবে! কবে যে সব কিছু স্বাভাবিক হবে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে। স্বামী মৃত্যুর পরে ঠিক মতো সামলে ওঠার আগেই এই লকডাউন যেন আমার জীবনের দ্বিতীয় বিপর্যয়!

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement