ঊর্ধ্বশ্বাসে: লকডাউনে রাস্তায় তাড়া সিভিকের। বালুরঘাটে। নিজস্ব চিত্র
কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি, কখনও আবার রোদ ঝলমলে আকাশ। আবহাওয়ার মতোই টানা ৪৮ ঘন্টার পূর্ণ লকডাউনের প্রথম দিন পুলিশের সঙ্গে কার্যত লুকোচুরির ছবি ধরা পড়ল গৌড়বঙ্গের তিন জেলা— মালদহ ও দুই দিনাজপুরে। লকডাউন ভেঙে রাস্তায় বের হওয়ায় জেলায় জেলায় ধরপাকড়ও চালায় পুলিশ। তবে তিন জেলাতেই দেখা গিয়েছে দোকান-বাজার থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাটের সুনসান ছবি।
মালদহ
ইংরেজবাজার: বাজার থেকে কিনে এনে রাখা হয়েছে আস্ত মুরগি। আলু, পেঁয়াজ কাটা হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে মাংস কাটা। বৃহস্পতিবার সকালে ইংরেজবাজার শহরের মালঞ্চপল্লি রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় চড়ুইভাতির আসরে হানা দেয় পুলিশ। পুলিশ দেখেই মুরগি ছেড়ে পালিয়ে যান সকলে। ছাড়া পেয়ে পালায় মুরগিও। লকডাউনে রাস্তা-ঘাট, দোকান-বাজার পুরো বন্ধ থাকলেও নিমাইসরা, ঝলঝলিয়া, কোঠাবাড়ি, মালঞ্চপল্লী এলাকায় জমায়েত করে আড্ডার ঠেকে অভিযান চালায় পুলিশ। লকডাউন ভাঙায় ইংরেজবাজার শহরেই আটক করা হয়েছে ৩০ জনকে।
হরিশ্চন্দ্রপুর: ব্যাগ নিয়ে বাজারে চলেছেন চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তি। গ্রামীণ রাস্তা থেকে পিচ রাস্তায় উঠতেই তাঁর পথ আটকায় পুলিশ। ‘‘লকডাউনে কোথায় যাচ্ছেন?’’ প্রশ্ন শুনে তাঁর জবাব, ‘‘লকডাউনের বিষয় ভুলে গিয়েছিলাম।’’ এরপরেই তাঁকে আটক করে পুলিশ। তাঁর মতোই লকডাউনে রাস্তায় বের হওয়া অনেকের হাতে ছিল পুরনো প্রেসক্রিপশন। তবে তাতে লাভ হয়নি। এ দিন সকাল থেকেই কড়া ভূমিকায় দেখা যায় পুলিশকে। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকেই গ্রেফতার করা হয় ৩৫ জনকে। এ ছাড়া চাঁচলে ৩৯ এবং রতুয়ায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
উত্তর দিনাজপুর
রায়গঞ্জ: মুখে মাস্ক নেই। উধাও সামাজিক দূরত্বও। রায়গঞ্জ শহরের রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় ঠিকাদারের অধীনে নিযুক্ত একদল শ্রমিককে এ ভাবেই বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ করতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। তবে তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির রায়গঞ্জ ডিভিশনের ম্যানেজার উৎপল দাস। অভিযোগ, শহরের রাস্তায় টোটো, মোটরবাইক যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। দুপুরে রাস্তায় নামেন রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসপ্রীত সিংহ। আটক করা হয় একাধিক মোটরবাইক। অনেককে বাড়িও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ইসলামপুর: দোকানের সাটার নামানো। ভিতরে ফুটছে চা। সাটারে টোকা মারলেই চা মিলছে। খবর পেয়েই অভিযান চালায় পুলিশ। ইসলামপুর শহরে। অভিযোগ, শহরে কিছু চা এবং খাবারের দোকান খোলা রেখে চলছিল কেনাবেচা। তবে অধিকাংশ দোকান-বাজারই বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের তৎপরতা দেখেই দুপুরের পরে দোকান-বাজার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
দক্ষিণ দিনাজপুর
বালুরঘাট: চকভৃগুর নদীপাড়ের ট্র্যাফিক মোড়ের একটি মিষ্টির দোকানে সকাল থেকেই ফুটছে চা। দোকানে ভিড় করে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন কয়েক জন। আচমকা দোকানে হাজির পুলিশ। পুলিশ দেখে অনেকে পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যায় বিক্রেতা এবং আরও তিন যুবক। তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। টানা দুদিনের লকডাউনের প্রথম দিন সকাল থেকেই পুলিশের তৎপরতা দেখা গিয়েছে। দোকান-বাজার বন্ধ থাকলেও কিছু কিছু এলাকায় চলছিল আড্ডা। তবে পুলিশ যেতেই উধাও হয়ে যায় ভিড়।
গঙ্গারামপুর: সকালের দিকে গঙ্গারামপুরের চৌমাথা মোড়, বুনিয়াদপুরের পীরতলায় আড্ডা দিতে দেখা যায় কয়েক জন যুবককে। পুলিশ লাঠি উচিয়ে তেড়ে যেতেই পালিয়ে যান তাঁরা। দুপুরের পর ছবিটা বদলে যায়। পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি শুরু হয় বৃষ্টি। ফলে শুনসান রাস্তাঘাট।
তথ্য সহায়তা: অভিজিৎ সাহা, বাপি মজুমদার, গৌর আচার্য, অভিজিৎ পাল, অনুপরতন মোহান্ত, নীহার বিশ্বাস