Coronavirus

আটটি মুখে ভাত জোটানোর চিন্তায় মাথা খারাপ দশা

বাইরে বেরোতে পারছি না। পুলিশের কড়াকড়ি। কিছু বিকল্প কাজ খুঁজব, তাই তারও উপায় নেই। বাড়িতে দু’টি শিশু রয়েছে।

Advertisement

শম্ভু পোদ্দার

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি

এখন কিছু করার নেই। কোথাও যাওয়ার নেই। সারা দিনরাত বাড়িতেই কাটাতে হচ্ছে। নড়াচড়ার জন্য বাড়িতে একচিলতে উঠোন আর দুটি টিনের চালা রয়েছে। পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে আজ প্রায় ৯ দিন ঘরবন্দি। কাজ বন্ধ হয়েছে আগেই। আয়হীন লকডাউনে গুমটি ঘরে সবাইকে নিয়ে কোনওক্রমে খেয়ে না খেয়ে চলছে।

Advertisement

বাইরে বেরোতে পারছি না। পুলিশের কড়াকড়ি। কিছু বিকল্প কাজ খুঁজব, তাই তারও উপায় নেই। বাড়িতে দু’টি শিশু রয়েছে। চট করে বাইরে বেরোতে সাহসও পাই না। সংক্রমণ ছড়ালে কেউ বাঁচব না। তাই খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে চালাতে হচ্ছে। কাজ করতে না পারলে কতদিন বসে চালাব?

দীর্ঘদিন আগে আমাদের রেশন কার্ড ছিল। কিন্তু একটি ডিলারের থেকে অন্য ডিলারের কাছে তা বদলি করে দেওয়ার নাম করে এক প্রতারক সেগুলি নিয়ে নিয়েছিল। তার পর থেকে অনেক ঘুরেও আর রেশন কার্ড জোগাড় করতে পারিনি। সে কার্ড থাকলে অন্তত রেশন থেকে এক মাসের খাবার পেতাম।

Advertisement

তাই অন্য সকলের থেকে আমার সমস্যা অনেক বেশি বলে আমি মনে করি। এই পরিস্থিতিতে আমি বিনীতভাবে বলি, প্রশাসন, সরকার আমার পাশে দাঁড়াক। না হলে আমি কীভাবে চালাব, তা বুঝতে পারছি না। পরিবারে বৃদ্ধ বাবা রয়েছেন, স্ত্রী, মেয়ে, দুই নাতনি রয়েছে। বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ। সব মিলিয়ে মোট ৮ জনের পেট চালাতে হয় আমাকে দু’বেলা।

গ্যারাজে গ্রিজ় বদলানোর কাজ করতাম। দেড়শো- দুশো টাকা রোজ আয় হত। সঙ্গে জামাই কিছুটা সাহায্য করত। গাড়ি চালাত। এখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কী ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্যে পড়লাম! কবে থামবে এই মহামারী ভাইরাসের দাপট? কত দিনে আবার খুলবে আমার গ্যারাজ, সেই অপেক্ষাতেই দিন কাটাচ্ছি। এভাবে থাকতে থাকতে হাঁপিয়েও উঠছি।

মাঝে মধ্যে খুব অবাক লাগে। পাড়ার গলির মুখে বেরোলেই ফিসফাস শুনি, ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ আর নেটফ্লিক্সের বিনোদনেও নাকি ‘বোর’ হয়ে উঠছেন শহুরে ঘরবন্দিরা। সূর্য ঢলে পড়তেই মোটরবাইক নিয়ে মদ খুঁজতে বার হচ্ছেন অনেকে। আমি আমার পরিবারের ৮টি মুখে তুলে দেওয়ার জন্য একটু ভাত খুঁজছি। আমার একটা সাধারণ মোবাইল ফোনও নেই। কেবলওয়ালা চার মাসের পয়সা পাবে। একটু একটু করে রোজ ভেঙে চলেছে পরিবারের আত্মবিশ্বাস। সব কিছু দেখে শুনে মনে হয়, এখনও যে বেঁচে আছি, এই ঢের।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement