ফাঁকা: বক্সা পাহাড় এলাকা।নিজস্ব চিত্র
পর্যটন বন্ধ। ফলে বন্ধ সমস্ত হোম স্টে। গাইডের কিংবা পিঠে করে পর্যটকদের ব্যাগপত্র বইবার কাজও নেই। দোকানে বিক্রিবাটা বন্ধ। ফলে টান পড়ছে নগদে। যার জেরে লকডাউন পরিস্থিতিতে বক্সা পাহাড়ের বাসিন্দাদের সমস্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। অথচ, তাঁদের দিকে প্রশাসনের খুব বেশি দৃষ্টি নেই বলেই অভিযোগ অনেকের। যদিও প্রশাসন তা মানতে নারাজ।
আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা পাহাড়ে ১২টি গ্রাম রয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলিই দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। এখানে মূলত স্কোয়াশ, আদা ও কমলালেবুর চাষ হয়। কিন্তু প্রতিবারই ফলন সমান হয় না। এবারই কমলালেবুতে মার খেতে হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের। এই অবস্থায় এলাকার বাসিন্দাদের অন্যতম ভরসা ছিল পর্যটন। সেইসঙ্গে অবশ্যই ১০০ দিনের কাজ। কিন্তু লকডাউনের জেরে এই মুহূর্তে এই দু’টো কাজই সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে চরম সমস্যায় বক্সা পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা।
বক্সা পাহাড়ে বেশ কিছু হোম স্টে রয়েছে। এলাকার অনেকে পর্যটকদের গাইড হিসাবে কাজ করেন। অনেকে আবার পিঠে করে পর্যটকদের ব্যাগপত্র বহনও করেন। কিন্তু টানা লকডাউনের জেরে পর্যটনই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই কাজগুলির সবই এখন বন্ধ। বক্সা পাহাড়ের বাসিন্দা গৌতম কার্জীর কথায়, ‘‘জমিতে আদা রোপণ ছাড়া লকডাউনের সময় থেকে বক্সা পাহাড়ের বাসিন্দাদের কোনও কাজই নেই। ফলে আয় বন্ধ। শেষ হয়ে যাচ্ছে জমানো টাকাও। টান পড়ছে পকেটে।’’ সান্তালাবাড়ির বাসিন্দা খিদোজি ডুকপা বলেন, ‘‘এ ভাবে কতদিন সংসার চলবে জানি না। টাকাই তো শেষ হয়ে আসছে।’’ খিদোজি সান্তালাবাড়িতে থাকলেও, তাঁর বাবা-মা আবার আদ্মা পাহাড়ে থাকেন। খিদোজির কথায়, ‘‘তাঁদের পরিস্থিতি আরও করুণ।’’
সান্তালাবাড়িতে সপ্তাহে একদিন করে হাট বসে। বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করেন। কিন্তু বাসিন্দাদের পকেটে টান পড়ায় সেখানেও বিক্রিবাটা কমে গিয়েছে। বক্সা পাহাড়ের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এই মুহূর্তে তাঁরা সরকারি রেশন পাচ্ছেন। তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গিয়ে সেখানে কিছু খাদ্য সামগ্রী দিয়েও এসেছে। কিন্তু প্রশাসনের তরফে যতটা দেখভালের প্রয়োজন ছিল, তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের কারও কারও। ডুয়ার্স ফরেস্ট ভিলেজার্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ানের সভাপতি গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘লকডাউনে বক্সা পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা বেড়েই চলছে।’’ তবে কালচিনির বিডিও ভূষণ শেরপা অবশ্য বলেন, ‘‘বক্সা পাহাড়ের বাসিন্দারা রেশন পাচ্ছেন। কোনও সমস্যা হলে, প্রশাসনকে জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’