উদ্যোগী: নিজেদের সারানো অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে চার বন্ধু। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্যারাজে পড়েছিল বিকল অ্যাম্বুল্যান্স। চাকা বসে গিয়েছিল। ধুলোর চাদরে ঢেকে গিয়েছিল গাড়ি। অচল গাড়ির দরজা খুলতেই মরা ইদুঁরের দুর্গন্ধে মাস্কের উপরে রুমাল দেওয়ার উপক্রম হয়। করোনা-কালে গ্রামবাসীদের কথা ভেবে চার বন্ধুর উদ্যোগে সেই অ্যাম্বুল্যান্সের খোলনলচে বদলে গেল। সোমবার রাতে সেই অ্যাম্বুল্যান্সে কোচবিহারের নার্সিংহোম থেকে এক রোগী ফিরলেন বলরামপুর গ্রামের বাড়িতে।
ঝাঁ চকচকে সেই অ্যাম্বুল্যান্সের প্রসঙ্গে মুখে মুখে ফিরছে চার বন্ধুর কথা। ওই উদ্যোগে অবশ্য অর্থের সংস্থান করেছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। তিনিও প্রায় বাতিলের খাতায় চলে যাওয়া, অ্যাম্বুল্যান্সটি নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য ওই যুবকদের সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চার বন্ধু শৈবাল দাস, পাপাই নারায়ণ, সুমন দাস, বিশাল নারায়ণ। কিছুদিন আগে শৈবালের এক বন্ধুর দাদু অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে কোচবিহার শহরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ শুরু করেন শৈবাল। করোনা আবহে তিনি কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে পারেননি বলে অভিযোগ। শৈবাল বলেন, “অন্তত চার-পাঁচটি নম্বরে ফোন করেছিলাম। লাহ হয়নি। তার পরেই গ্রাম পঞ্চায়েতে পড়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স মেরামতের ভাবনা মাথায় আসে। প্রধানও পাশে দাঁড়ান। গাড়ি গ্যারাজে পৌছনোর ব্যবস্থা আমরা চার জন করি। সেই গাড়িতে সোমবার থেকে রোগী পরিষেবা মিলছে।”
কোচবিহার কলেজের প্রাক্তনী পাপাই বলেন, “সকলের সঙ্গে আমিও প্রধানের কাছে দরবার করি। তিনি পাশে থাকার আশ্বাস দেন। গাড়িটার যা অবস্থা ছিল এখন দেখলে বুঝবেন না। ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে।” কোচবিহার পলিটেকনিকের ছাত্র সুমন বলেন, “পরিষ্কার করে গ্যারাজে নিয়ে যাওয়ার কাজ আমরা চার বন্ধু মিলে করেছিলাম।”
করোনা আবহ। তাই একটা পিপিই কিটও নিয়ে রেখেছেন ওই যুবকেরা। চার বন্ধুর মধ্যে গাড়ি চালাতে পারেন দু’জন। শৈবাল বলছেন, ‘‘আমি গাড়ি চালাতে পারি। জরুরি প্রয়োজনে সমস্যা হবে না।’’ বলরামপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কুমার নীরেন্দ্র নারায়ণ বলেন, “প্রায় এক বছর ধরে নানা সমস্যায় অ্যাম্বুল্যান্সটি পড়েছিল। ওই চার জন সেটি সচল করে রাস্তায় নামাতে দারুণ সহযোগিতা করেছেন।”
উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন, প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। যাঁর বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দে নাটাবাড়ি এলাকার ওই গ্রাম পঞ্চায়েতকে অ্যাম্বুল্যান্সটি দেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ বলেন, “করোনা অতিমারিতে অ্যাম্বুল্যান্সের চাহিদা বেড়েছে। পড়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স মেরামত করে পরিষেবা চালুর উদ্যোগ প্রশংসনীয়।”