সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা সেই চিঠি। নিজস্ব চিত্র
খাতা থেকে ছিঁড়ে নেওয়া ছোট্ট এক টুকরো লাইন টানা কাগজ। তাতে কাঁচা হাতে লেখা—“তিন দিন থেকে কিছু খাচ্ছি না। কোনও ব্যবস্থা করো। আমরা মালদহ জেলার লোক। এখানে কাজ করতে এসে ফেঁসে গিয়েছি।’’
বৃহস্পতিবার তেলঙ্গানার হায়দরাবাদ সংলগ্ন রামচন্দ্রপুরম থানার তেল্লাপুর থেকে তাঁদের দুর্দশার কথা এ ভাবেই কাগজে লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন মালদহের কালিয়াচকের মোজমপুর ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় পুলিশ বাংলা বোঝে না। ফলে লকডাউনের মধ্যে ঘর থেকে বেরোলেই জুটছে লাঠিপেটা। তাঁরা হায়দরাবাদের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থার অধীনে বহুতল তৈরির কাজে, কেউ রাজমিস্ত্রি হিসেবে, কেউ বা দিনমজুর হিসেবে কর্মরত। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাড়ি ফেরার আর্জি জানিয়ে তাঁরা ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিয়ো বার্তা পাঠান দক্ষিণ মালদহের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) ও সুজাপুরের বিধায়ক ইশা খান চৌধুরীর কাছেও। জানা গিয়েছে, তেলঙ্গানায় আটকে পড়া ওই শ্রমিকদের ব্যাপারে ডালু ও ইশা মালদহ জেলা প্রশাসন ও রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কাজের জন্য ২৫ দিন আগে তেলঙ্গানার রামচন্দ্রপুরম থানার তেল্লাপুরে যান কালিয়াচকের মোজমপুরের মোতাহার শেখ। তিনি একটি বহুতল নির্মাণ সংস্থায় রাজমিস্ত্রির কাজও পেয়ে যান। মজুরি দিনে ৬৫০ টাকা। বাড়তি কাজে দিনে ৮৫০ টাকা। সেই সংস্থা থাকার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করছে। টিনের বেড়া ও চাল দেওয়া এক একটি ঘরে পাঁচ থেকে সাত জনকে ঢালাও বিছানা পেতে থাকতে হয়। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মাস না শেষ হওয়ায় সংস্থার কাছ থেকে এখনও বেতন পায়নি। যে টাকা বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম তা-ও শেষ। অন্য সঙ্গীদের থেকে টাকা ধার নিয়ে দু’দিন খেয়েছি। লকডাউনের পরে তিন দিন না খেয়েই রয়েছি। শুধু জল ভরসা। অনেকেরই এই হাল।’’
মালদহ জেলার বহু মানুষ দু’মুঠো ভাতের জন্য পাড়ি দেন ভিন্ রাজ্যে। মহারাষ্ট্র, কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানায় তাঁরা মূলত নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। করোনাভাইরাস নিয়ে দেশ জুড়ে যখন হইচই শুরু হয়, তখন ভিন্ রাজ্য থেকে অনেক শ্রমিকই মালদহে ফিরে আসেন পড়িমড়ি করে। পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সাড়ে পাঁচশোরও বেশি জনকে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেকে ফিরতে পারেননি। দেশজুড়ে লকডাউন হওয়ার পরে ট্রেন ও সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সেই রাজ্যগুলিতে আটকে পড়েছেন। আর তাঁদেরই এখন দিন কাটছে চরম দুর্দশায়।
তেল্লাপুরেই আটকে পড়া হারুচকের ফিরোজ খান, নারায়ণপুরের তারিফ খান ও ইমাম জায়গিরের কামালউদ্দিন শেখরা বলেন, “যে সংস্থায় কাজ করছি তারা আমাদের দেখছে না। খাবারের ব্যবস্থা নেই। লকডাউনে বাইরে বার হয়ে খাবার জোগাড় করতে গেলেই পুলিশ লাঠিপেটা করছে। সাংসদ, বিধায়ক, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছি যাতে তাঁরা বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করেন।’’
ইশা বলেন, “তেলঙ্গানায় আমার বিধানসভায় এলাকার কয়েকশো শ্রমিক আটকে পড়েছেন। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। রাজ্য সরকারকেও জানানো হয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “গোটা দেশে লকডাউন চলছে। শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা কার্যত অসম্ভব। রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা যাতে করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’