সুরক্ষায়: সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হাসপাতালেও কাটা হয়েছে গণ্ডি। শুক্রবার, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু ওয়ার্ডের বাইরে। ছবি: জয়ন্ত সেন
ইংরেজবাজার শহরের কুট্টিটোলার বাসিন্দা বস্ত্র ব্যবসায়ী নারায়ণ দাস প্রতি মাসের ১ তারিখেই মুদিখানার সামগ্রী কেনেন। তিন জনের সংসারের জন্য প্রতি মাসে ওই কেনাকাটায় তাঁর খরচ হয় খুব বেশি হলেও দেড় হাজার টাকা। মাসপয়লার এখনও দিন চারেক বাকি আছে। শুক্রবার সকালে তিনটি থলে নিয়ে সাইকেলে নারায়ণ চলে যান দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন বাজারের মুদিখানায়।
তাঁকে দেখে দোকানি বলেন, ‘‘এ মাসে এত আগেই চলে এলেন যে?" নারায়ণের জবাব, ‘‘লকডাউনের সময় আরও বাড়তে পারে সেই আতঙ্কে ব্যাগ ভরে ভরে চাল, ডাল, তেল, নুন কিনছেন অনেকে। এর পরে যদি কিছু না মেলে, তাই চলে এলাম।’’ বলেই তিনি পকেট থেকে বের করলেন লম্বা ফর্দ। নারায়ণ জানান, এ দিন পাঁচ কেজি আটা, দু'কেজি মসুরের ডাল, ৫ লিটারের একটি সরষের তেলের জার, তিন কেজি চিনি, চারটে নুনের প্যাকেট ও অন্য সামগ্রী নিলেন। দাম মেটালেন পাঁচ হাজার ৩৭০ টাকা।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গৌড়বঙ্গের মালদহ ও দুই দিনাজপুর জেলায় শুক্রবার সকালে দোকান খুলতেই এ ভাবে জিনিস কিনে বাড়িতে মজুত করলেন অনেকেই। পুলিশের লাঠি, সচেতনতা প্রচার— কোনও কিছুই কাজ হচ্ছে না। বাজার খুললেই উপচে পড়ছে ভিড়। সবার মধ্যেই খাবার মজুত করার প্রতিয়োগিতা চলছে। যদিও বাড়িতে অযথা মজুত আটকাতে প্রশাসনের তরফে তিন জেলায় মাইকিং করে সচেতন করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। কিন্তু তা কোনও কাজ আসছে না বলে অভিযোগ। মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘জেলায় সমস্ত জিনিসপত্র পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে আতঙ্কের কারণ নেই। অযথা বাড়িতে মজুত বন্ধ করা উচিত।"
মালদহের সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানো বলেন, ‘‘অযথা আতঙ্কিত হয়ে মানুষ যেন বাজার থেকে অতিরিক্ত পণ্যসামগ্রী বাড়িতে নিয়ে মজুত না করেন তা নিয়ে আমরা মাইকিং করে প্রচার করছি।’’ উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনার বক্তব্য, ‘‘জেলার সমস্ত বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কোনও অভাব নেই। বাসিন্দাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সে সব সামগ্রী কেনার অনুরোধ করা হচ্ছে।’’ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলায় সমস্ত ধরনের পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে। অযথা আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে স্বাভাবিক ভাবেই কেনাকাটা করতে বলা হচ্ছে।’’