মানবিক: শান্তনু শর্মা এবং অনুস্মিতা। (পাশে) অনির্বাণ নন্দী ও পৌলমী নন্দী। নিজস্ব চিত্র।
এক শহরের দম্পতির হাতে একটি মাত্র সিলিন্ডার, আরেক শহরের দম্পতি কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতেই কয়েকটি সিলিন্ডার জোগাড় করে রেখেছিলেন। গভীর রাত হোক বা ভোর, ফোন পেলেই অক্সিজেন নিয়ে ছুটছেন দুই শহরের দম্পতি। কোভিড আক্রান্তের বাড়িতে ঢুকে রোগীর বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে অক্সিজেন লাগিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি দুই শহরের বহু কোভিড আক্রান্ত দুই দম্পতির দেওয়া অক্সিজেন পেয়ে সুস্থ হয়েছেন। শহরের এ মাথা থেকে ও মাথায়, আরও রোগীদের সুস্থ করতে অক্সিজেন নিয়ে ছুটছেন রাতদিন।
অনুস্মিতা-শান্তনু
বাইকে স্বামী-স্ত্রী, মাঝে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার। পিপিই পরে সিলিন্ডার নিয়ে অক্সিজেন নিয়ে দম্পতির বাইক ছুটছে, এ দৃশ্য জলপাইগুড়ি শহরে অনেকেই দেখে নিয়েছেন। একটা ফোনের অপেক্ষা শুধু। যে কোনও কোভিড আক্রান্তের বাড়িতে অক্সিজেন দিতে পৌঁছে যাচ্ছেন শান্তনু শর্মা এবং তাঁর স্ত্রী অনুস্মিতা। দু’জনে একটি নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান। সেই সুবাদে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল তাঁদের কাছে। কোভিডের দ্বিতীয় সংক্রমণে অক্সিজেন সঙ্কটের খবর পেয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত একটি সিলিন্ডার দিয়েই পরিষেবা দিতে হবে। বাড়িতে থাকা কোনও কোভিড রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন খবর পেলে বাড়িতে গিয়ে সিলিন্ডার দিয়ে আসেন। পরদিন আবার নিজেরাই সিলিন্ডার নিয়ে এসে অন্য রোগীর বাড়ি পৌঁছে দেন। সঙ্গে থাকে রক্তচাপ মাপা, অক্সিজেনের মাত্রা দেখার যন্ত্র। কোভিড রোগীদের শারীরিক পরীক্ষাও করে দেন তাঁরা।
আক্রান্ত হওয়ার ভয় পান না?
শান্তনু বলেন, “সকলে যদি ভয় পায়, তাহলে রোগীরা তো চিকিৎসাই পাবে না। সেটাই সবচেয়ে বড় ভয়।” অনুস্মিতা বাইকের মাঝে সিলিন্ডার ধরে বসেন। তাঁর কথায়, “অভ্যেস হয়ে গিয়েছে, দিনে অন্তত চার পাঁচবার সিলিন্ডার নিয়ে বার তো হতেই হয়।”
পৌলমী-অনির্বাণ
ঘড়িতে সময়ে দেখেন না। রাত ২ টা কিংবা সকাল ৭ টা যখনই মোবাইলে ফোন আসছে তখনই ছুটছেন তাঁরা। শুধু ঠিকানা জেনে নিচ্ছেন। তারপর সোজা অক্সিজেন নিয়ে হাজির হয়ে যান করোনা রোগীদের দুয়ারে। হাতে-কলমে শিখিয়েও দেন কীভাবে অক্সিজেন নিতে হবে। এভাবেই নিরলস প্রচেষ্টায় অক্সিজেন ব্যাঙ্ক বানিয়ে নজির গড়ছেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা অনির্বাণ নন্দী ও পৌলমী নন্দী। এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে দম্পতি অক্সিজেন সিলিণ্ডার জোগাড় করতে নেমে পড়েছিলেন। পুরোনো বেশকিছু সিলিন্ডার তাঁরা সংগ্রহ করেন। কয়েকজন নতুন সিলিন্ডারও তাঁদের দিয়েছেন। সবটাই রাখছেন বাড়িতে। সেখান থেকে প্রয়োজন মতো পরিষেবা দিচ্ছেন।
অনির্বাণ খড়গপুর আইআইটির রিসার্চ ফেলো হিসেবে গ্রামন্নোয়নের উপর গবেষণা করেছেন। পৌলমী সোশ্যালওয়ার্ক নিয়ে পড়াশোনা করেন আইআইটির প্রকল্পে রসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট। অনির্বাণের কথায়, ‘‘শিলিগুড়ির বিভিন্ন পাড়া, শিবমন্দির, মাটিগাড়া যেখান থেকে ফোন আসছে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে আসছি। ফিরে আসলেই সেটা আবার রিফিলিং করে অন্যত্র দেওয়া হচ্ছে।’’ বাড়িতে সন্তান, পরিবার রয়েছে। তারমধ্যেই স্বামীর সঙ্গে স্কুটি, গাড়িতে বসে অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে পৌলমীও। তাঁর কথা, ‘‘মাঝেমধ্যে করোনা নিয়ে ভয় হয়। কিন্তু ভয় পেলে মানুষ অক্সিজেন পাবে কীভাবে?’’